ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়

ব্লাড ক্যান্সার খুবই আতঙ্কিত একটি নাম। ব্লাড ক্যান্সার মানেই মৃত্যু। মানুষের মনে চিন্তাভাবনা এরকমটাই হয়ে আছে। কিন্তু এ আধুনিক যুগে এসব ধারণা একেবারে ভুল। বর্তমান যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে এখন ক্যান্সার থেকে একজন মানুষকে সুস্থ করে কোন অসম্ভব বিষয় না। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব ব্লাড ক্যান্সার কি, ব্লাড ক্যান্সার লক্ষণ এবং ব্লাড ক্যান্সার কত ভাবে হয়ে থাকে।
এই পোস্টে আরো আলোচনা করব ব্লাড ক্যান্সার হলে করণীয়,কি ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়, ব্লাড ক্যান্সারের জন্য কত টাকা খরচ হতে পারে ইত্যাদি দিয়ে আরো অনেক কিছু আলোচনা করব।

সূচিপত্রঃ

ব্লাড ক্যান্সার কি ও কত প্রকার?

ব্লাড ক্যান্সার হল শরীরের জন্য একটি মারাত্মক রোগ। ব্লাড ক্যান্সার হল মানুষের শরীরে রক্ত রয়েছে। এই রক্ত আবার তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। প্রথমত লোহিত রক্ত কণিকা, দ্বিতীয় শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। লোহিত রক্ত কণিকা যখন শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তখন শ্বেত রক্তকণিকা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলে সাথে সাথে অনুচক্রিকা কমতে থাকে এভাবে আমাদের শরীরে আস্তে আস্তে রক্তশূন্যতায় অসুস্থ হয়ে যায়।

ব্লাড ক্যান্সারকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ব্লাড ক্যান্সারের এই তিন ভাগ নিম্নে আলোচনা করা হলো।

হোয়াইট ব্লাড সেল অর্থাৎ শ্বেত কণিকা থেকে সৃষ্টি ব্লাডকে ব্লাড ক্যান্সার বলা হয়। ব্লাড ক্যান্সার  আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে।

  • একিউট মাইলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া
  • একিউট লিমফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া
  • একিউট লিমফোসাইটিক লিউকেমিয়া

লিমফোমা হল লসিকা গ্রন্থি থেকে সৃষ্টি এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার। এরকম ব্লাড ক্যান্সার ২ ধরনের হয়।

হজকিন ও নন হজকিন
  • লিমফোব্লাস্টিক ইত্যাদি
  • মাইলোমা ও প্লাজমা সেল থেকে সৃষ্টি ব্লাড ক্যান্সার।

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ

দীর্ঘদিন ধরে যদি একটা মানুষের শরীরে জ্বর থাকে ওষুধ খাওয়ার পরও ভালো ভাই আবার অনেক সময় ঘন ঘন জ্বর হয়। ব্লাড ক্যান্সারের জন্য মানুষের শরীরে রক্ত প্রবাহিত ধীরে ধীরে কমে যায়। লোহিত রক্ত কণিকার জন্য শরীরের রক্ত আস্তে আস্তে কমে যায় আবার অন্যদিকে শ্বেত রক্তকণিকার মধ্যে ইনফেকশন ধরে যায়। তখন শরীরের রক্তকণিকা আস্তে আস্তে কমে যায়। দেহের অস্বাভাবিক রক্তকণিকার জন্য প্লীহা ভাঙতে থাকে এবং প্লীহা শরীরের বড় হতে থাকে। 

ব্লাড ক্যান্সার অস্থিমজ্জ্যার  মধ্যে বেশি বাড়তে থাকে এর সাথে অনুচক্রিকা বৃদ্ধির হতে পারে না, তখন মানুষের মস্তিষ্কে ধারণক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। তখন মানবদেহে হাড্ডিগুলোতে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি। শরীরে অস্বাভাবিকভাবে রক্তক্ষরণ, প্রসবের সাথে রক্ত বের হওয়া, মানুষের মাসিক বেশি হওয়া ও কাশির সাথে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি এগুলো ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ।

ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো কি কি

এখন আমরা জানতে পারবো ব্লাড ক্যান্সার প্রাথমিক লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে। নিম্নে এ লক্ষণগুলো যদি একজন মানুষের দেখা যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তস্বল্পতার কারণে শরীর দুর্বলঃ শরীরে যদি ব্লাড ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে মানুষের শরীরের রক্ত উৎপন্ন হয় না। বিভিন্নভাবে শরীরে রক্ত বের হয়ে যায়, যেমন খাসির মাধ্যমে, পায়ু পথের মাধ্যমে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।

খাবারে অরুচি হওয়াঃ ব্লাড ক্যান্সারের জন্য খাবারের অরুচি হয়। প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যেও এটি একটি ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ।

হার্টবিট বেড়ে যাওয়াঃ কেউ যদি একটু বেশি দৌড়াই বা হাটাহাটি করে অথবা সামান্য পরিশ্রম করলেই তার শরীরে হার্টবিট বেড়ে যায়।

পায়ে পানি জমাঃ ব্লাড ক্যান্সার রোগীর পায়ে পানি জমতে শুরু করে।

স্ক্রিন ফেকাসে হয়ে যাওয়াঃ ব্লাড ক্যান্সারের কারণে শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত কমে যায় যার ফলে চেহারাও এবং শরীর দুইটাই ফ্যকাশে হয়ে যায়। শূন্যতার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে যায় সেই সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কারণ শরীর ফেকাস হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ।

শরীরে ব্লাড ক্যান্সার হলে কি সমস্যা হয়

মানবদেহে ব্লাড ক্যান্সার হলে কি সমস্যা হয় এবং শরীরের কি কি পরিবর্তন হতে থাকে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব। নিচের অংশটুকু অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে পড়বেন।

মানব দেহে অস্থিমজ্জের ভেতরে রক্ত তৈরি হয়। শরীরের রক্ত মাংসের সমন্বয় তৈরি হতে থাকে। অস্থিমজ্জাযের মাধ্যমে রক্তকণিকা গুলো দেহের শিরা-উপশীরা থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় অর্থাৎ শরীরে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। রক্ত কণিকা আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে, যথা লোহিত রক্তকণিকা অর্থাৎ রেড ব্লাড সেল, শ্বেত রক্তকণিকা অর্থাৎ হোয়াইট ব্লাড সেল ও অনুচক্রিকা। অস্থিমজ্জের ভেতর দিয়ে রক্তকণিকা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এটি হলো ব্লাড ক্যান্সার। রোগকে আবার লিউকোমিয়াও বলা হয়।

লোহিত রক্ত কণিকা ও অনুচক্রিকার পরিমান কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ হলো অস্বাভাবিকভাবে রক্তকণিকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এগুলো ছাড়া ও ব্লাড ক্যান্সারের সম্পর্কে উপরোক্ত অনেকগুলো আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের শরীরে প্রচুর ব্যথা হয় এবং শরীরে যতটুকু রক্ত প্রয়োজন উৎপন্ন করতে পারে না।আপনি যদি সঠিক সময়ে ব্লাড ক্যান্সের চিকিৎসা না নেন তাহলে অবশ্যই মৃত্যু অনিবার্য। তাই অবশ্যই ব্লাড ক্যান্সার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন,আশা করি বুঝতে পেরেছেন ব্লাড ক্যান্সার হলে কি সমস্যা হয়।

ব্লাড ক্যান্সার চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হয়

মানুষের শরীরে ব্লাড ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা সাধারণত কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ব্লাড ক্যান্সারের জন্য সাধারণ খরচ ও সময় এবং শরীরে কোন ধরনের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে তারপরে নির্ধারিত হয়।শরীরে যদি ব্লাড ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে একটি হল স্বল্প মেয়াদী ও আরেকটি হল দীর্ঘ মিয়াদি ক্যান্সারের উপর নির্ভরযোগ্য। আবার অনেকের শরীরে অনেক বড় ধরনের ব্লাড ক্যান্সার হয়ে থাকে তার জন্য বোনম্যারো ট্রান্স পয়েন্ট করা লাগতে পারে।

বাংলাদেশে ব্লাড ক্যান্সারের জন্য তিনটি থেরাপি রয়েছে। ও রেডিওথেরাপি। এ দুইটি থেরাপির জন্য খরচ হয় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু বোনেরও ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

তবে ইন্ডিয়াতে বা ভারতে কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। কারণ ভারতে বড় বড় ক্যান্সার হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টার আছে। ভারতে হাসপাতালগুলো চিকিৎসায় ব্যয়বহুল হলেও অনেক উন্নতমানের। ভারতে ভিসা হোটেল থাকা খাওয়া চিকিৎসা সবকিছু মিলে খরচটা অনেকটা বেড়ে যায়।

ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়

ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আগে আপনাকে জানতে হবে ব্লাড ক্যান্সারের কারণ গুলো কি কি। আপনি যদি ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে জানেন এবং কারন গুলো সঠিকভাবে জেনে থাকেন তাহলে ব্লাড ক্যান্সার থেকে অবশ্যই মুক্তি পাবেন।

ব্লাড ক্যান্সারের কারণ গুলো হল

অনিরাপদ খাবারঃ প্যাকেটের খাবার, এখন প্যাকেটের খাবার দেখতে অনেক সুন্দর করার জন্য ও খাবার অনেক সুস্বাদু করার জন্য অনেক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় যা ক্যান্সারে ঝুঁকে বাড়ানোর জন্য সাহায্য করে। প্যাকেটজাত খাবার,রোক্রিয়াজাত মাংস এগুলো ব্লাড ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্যঃ দোকানে অনেকদিন ধরে প্যাকেট-জাত খাদ্যগুলো দেওয়া থাকে সেগুলো খাবার ডেট ফেল হয়ে থাকে। খাবার ঠিকমতো সংরক্ষণ করা থাকে না এরকম ধরনের খাবার খেলে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।

ফরমালিন ব্যবহার খাবারঃ আপনি অনেক ধরনের ফলমূল খেয়ে থাকেন এই ফলগুলো আপনি অনেকদিন ধরে খেতে পারেন এর কারণ ফলে ফরমালিন দেওয়া থাকে। ফরমালিনযুক্ত খাবারগুলো শরীরে জন্য ক্যান্সারের ঝুঁকে পূর্ণ হয়ে থাকে।

বংশগতঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় বংশগত কারণে অনেক মানুষের ব্লাড ক্যান্সার হয়ে থাকে।
নেশা দ্রব্য গ্রহণঃ নেশা জাতীয় দ্রব্য যেমন মদ,হিরোইন,ইয়াবা ইত্যাদি নিশা সেবন করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়

নিরাপদ খাবার খাওয়াঃ মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার যেমন রং মেশানো খাবার, অনেকদিন ধরে পড়ে থাকা মাংস প্যাকেটজাত খাবার এগুলো সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে। সব সময় প্যাকেটজাত দ্রব্য ডেড দেখে নিতে হবে,খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শাকসবজি খাওয়াঃ বাসায় বেশি বেশি শাকসবজি খেতে হবে এবং খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কিছু কিছু শাকসবজিতে এক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমঃ আমাদের শরীরে ঘুম খুবই প্রয়োজন একটি জিনিস। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ঘুমাতে হবে। নির্দিষ্ট ঘুম না হলে শরীর অনেক ধরনের অসুখ দেখা যায় সেখান থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।

ব্যায়ামঃ প্রতিদিন আপনাকে শারীরিক ব্যায়াম করা লাগবে। ব্যামের জন্য আপনাকে সর্বনিম্ন ৩০ মিনিট সময় দিতে হবে। ৩০ মিনিটের মধ্যে হাঁটাহাঁটি ও অনেক ধরনের ব্যায়াম আছে সেগুলো করা লাগবে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

শেষ কথা

একটু আলোচনা থাকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে ব্লাড ক্যান্সার কি কত প্রকার হতে পারে এবং ব্লাড ক্যান্সার প্রাথমিক লক্ষণগুলো ও ব্লাড ক্যান্সারের মুক্তির উপায়। বাট ক্যান্সারের জন্য কত টাকা খরচ হতে পারে চিকিৎসার জন্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা উপুক্ত আলোচনা করেছি। আপনি কিভাবে জীবন যাপন করলে ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাবেন সেই বিষয়ে বলা হয়েছে। আশা করি উপরোক্তা আলোচনা থেকে আপনারা অবশ্য উপকৃত হবেন, আরো সুন্দর সুন্দর পোস্ট পড়ার জন্য সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url