মোবাইল ফোন ব্যবহারে ১৫টি ক্ষতিকর দিক
আপনি মোবাইল কিনতে চাচ্ছেন? তাহলে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ১৫টি ক্ষতিকর দিক জেনে নেওয়া যাক। আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারে অনেকটা অসচেতন। তারবিহীন ক্ষুদ্র যন্ত্রটি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা মোবাইল কেনার আগে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ১৫টি ক্ষতিকর দিক জেনে নেই। মোবাইল ফোন ব্যবহারে ১৫টি ক্ষতিকর দিক নিম্নে আলোচনা করা হলো।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh9z1cF4sKhg8fZcu9RHgMGt90D2DFInVtVKFloZ0kU4jm9ShA3EcrUFbjU5mSvs_uoHQtk2o7HhbV0m7xc3BFO_sU3nOx43eQvmjHfICKOkcjSAp-TXZyoCAjL42j2g5ezvhytTtrzZBv--n2PhAd0QCAp_V5jHzFrY-qF6ccrrIuLgc4_u_u6nqZO/s16000/%E0%A6%A1%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%9F.jpg)
মোবাইল ফোন ব্যবহারে ১৫টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পরে আপনি যেকোনো মোবাইল ফোন ব্যবহারে ১৫টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত হবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ
- মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক
- মোবাইল ফোন ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা
- চোখের সমস্যা হওয়া
- কানে কম শোনা
- অস্থি সন্ধিগুলোর ক্ষতি
- অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করে শুক্রাণু কমে যাওয়া
- নোমোফোবিয়া রোগ
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- হঠাৎ করে রিংটোন সোনা
- চিন্তাশক্তি কমে যাওয়া
- পর্নোগ্রাফি আসক্তি
- মা বাবার কথা অমান্য
- সুলভ মূল্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক
- ঘুমের সমস্যা হওয়া
- শরীরের রোগবালাই সৃষ্টি
- হার্টের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব
মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক
মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। অত্যাধিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাফিংটন পোস্টে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারের ফলে মানুষ মানসিক এবং শারীরিকভাবে নানা ধরনের সমস্যাতে পড়ছেন। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদদের আলোচনায় মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতি করে দিক কথা বলা হয়েছে। চলুন নিচে জেনে নেই মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি।
১। মোবাইল ফোন ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা
আমরা যখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করি তখন মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি। একাধারে মোবাইলের দিকে তাকালে ঘাড়ের সমস্যা সৃষ্টি হয়। মোবাইলে গেম আসক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া মনোযোগ এবং স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখতে গিয়ে দেহের অবস্থান ঠিক রাখা হয় না। মোবাইল ফোনের সঠিক দূরত্ব বজায় থাকে না। ফলে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক হিসেবে প্রথমত বলা যায়, ঘাড় ব্যথা। এজন্য সঠিকভাবে দূরত্ব বজায় রেখে মোবাইল ব্যবহার করা এবং দেহের অবস্থান ঠিক রাখা।
২। চোখের সমস্যা হওয়া
মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক হলো চোখের সমস্যা। অনেকে কাছে থেকে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের জ্যোতির সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্য দৃষ্টি শক্তি হারাতে হয়েছে। পাওয়ার চশমা ব্যবহার করে থাকে। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে দৃষ্টি শক্তি হারানোর জন্য মোবাইল দায়ী হতে পারে।
তাই মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্ষতিকর দিকগুলো মেনে চলা উচিত।মোবাইল ফোনের স্ক্রিন বড় করে কমপক্ষে১৭ইঞ্চি দূরে রেখে এবং ২৫ সেকেন্ড এর জন্য চোখ স্কিনের থেকে দূরে রাখতে হবে। সব সময় মোবাইলের স্ক্রিনের আলো কমিয়ে রাখতে হবে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান আনা সম্ভব।
৩। কানে কম শোনা
আপনি অনেক মানুষকে দেখছেন, মোবাইল ফোনে অনেকক্ষণ কথা বলে। কানে হেডফোন লাগিয়ে অনেক জোরে গান বাজাতে ভালবাসে। এইসব কারণে মানুষের শ্রবণ শক্তি হারানোর মতো অনেক গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে ১৭ থেকে ২৪ বছরের ছেলে-মেয়েদের শ্রবণ শক্তি হারানোর হার সব থেকে বেশি। প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার কারীদের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৪। অস্থি সন্ধিগুলোর ক্ষতি
প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের ১৬ জুন Doscout ব্লগে আলোচনা সাপেক্ষে দেখা যায় যে, তিনজন সাধারণ মানুষ মোবাইল ব্যবহারকারী ক্রিনের ট্যাপ, সোয়াইপ এবং ক্লিক ঘরে ২৬১৮ বার এবং সর্বোচ্চ ৫৪২৭ বার। এই কারণে আঙ্গুলের ব্যথা হয়। এর ফলে অর্থরাইটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ফোন চালানোর কারণে শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, মোবাইল ফোনে বেশিক্ষণ টাইপিং না করে সঠিকভাবে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত।
৫। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করে শুক্রাণু কমে যাওয়া
মোবাইল ফোন থেকে তৈরি হওয়া হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইলেকট্র ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের কোষ ও পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের উপরে বিশাল প্রভাব ফেলে থাকে। শুক্রাণুর ঘনত্ব হ্রাস পাওয়ার কারণ হল মোবাইলের ক্ষতিকর তরঙ্গ। এর ফলে দেহের শুক্রানুর ক্ষতি হয়। গবেষকরা দাবি করেন পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার।
প্যান্টের পকেটে বা জামার সাইডে মোবাইল ফোন রেখে দেওয়ার ফলে মোবাইল উত্তপ্ত থাকার কারণে অন্ডকোষের চারপাশে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, এর ফলে দেহে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইজন্য প্যান্টের পকেট বা শরীরের অঙ্গের কাছে মোবাইল ফোন না রাখার পরামর্শ দেন গবেষকরা।
৬। নোমোফোবিয়া রোগ
সব সময় মোবাইল ব্যবহারের ফলে মনের মধ্যে মনে হয় মোবাইল আছে কিনা অথবা মোবাইল হারিয়ে গেছে কিনা। এই ধরনের ভয় সৃষ্টি হয়। নোমোফোবিয়া একটি রোগ অর্থাৎ নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া। ভারত এবং যুক্তরাজ্যর তরুণ যথাক্রমে ২৯. ৫৩ শতাংশ রোগের শিকার হয়। এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের প্রভাব ফেলে এবং মানসিক চাপ তৈরি করে। তাই যত সম্ভব মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করা উচিত।
৭। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার করলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যে কোন ধরনের কাজে অমনোযোগী এবং শরীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সহজে এই সমস্যা উপলব্ধি করতে পারে, মানুষের সাথে অশোভনীয় আচরণ করে থাকে। এই ধরনের সমস্যা হলে সেই সময় থেকে মোবাইল ব্যবহার করা কমিয়ে দিতে হবে।
৮। হঠাৎ করে রিংটোন সোনা
মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারী রিংটোন বা ভাইব্রেশন শব্দ পান। এটা মনের উদ্বিগ্নতা এবং বিষন্নতা থেকে আসে। অর্থাৎ আপনি যদি অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন তাহলে মনে হবে কখন বলে কল আসলো আবার কখন নোটিফিকেশন আসলো। অথচ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখবেন এমন কোন কিছু হয়নি। যারা অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করে তারা এই সমস্যার সম্মুখে পড়বেন। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন মোবাইলের কাছে থেকে দূরে থাকা।
৯। চিন্তাশক্তি কমে যাওয়া
মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে চিন্তাশক্তি কমে যায়। কোন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে গেলে নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে উদ্ভাবনীয় ক্ষমতা হয়। মোবাইল ফোনের জন্য শিক্ষার্থীরা নকলের আশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে। আপনার বাচ্চাকে মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করতে দিবেন না।
১০। পর্নোগ্রাফি আসক্তি
মোবাইল ফোন সুলভ হওয়ার কারণে সব ধরনের মানুষ এবং সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। এর কারণে অনৈতিক কর্মকান্ড বেশি চলছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তরুণ তরুণীরা পোর্ন আসক্তি হয়ে পড়ছে। ফাউন্ডেশন নামক প্রতিবেদন মানুষের জন্য, রাজনীতিতে ৭৭ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফি আসক্ত হচ্ছে, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে পরতে হচ্ছে।
যার প্রবণতা বেড়ে চলছে। তাই আমার আপনাদের সবাইকে শিশু-কিশোরদের চোখে চোখে রাখতে হবে বলে মনে হয়। মোবাইলে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।
১১। মা বাবার কথা অমান্য
আমাদের মত মানুষেরা সবাই ছোট বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দেই। যার ফলে মোবাইল আসক্ত হয়ে মা-বাবা এর কথা অমান্য করে চলে, এর ফলে মানসিক রোগীতে পরিণত হতে পারে।
১২। সুলভ মূল্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক
দেশে সুলভ মূল্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য কেউ ভালো কাজে ব্যবহার করছে আবার কেউ খারাপ কাজে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন জায়গাতে আবাসিক ভবন, গ্রামের জমিতে টাওয়ার দেওয়ার কারণে রেডিয়েশনের জন্য শরীরের পাশাপাশি গাছপালা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
১৩। ঘুমের সমস্যা হওয়া
অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ব্যবহারের কারণে ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। কারণ মাথার ছোট ছোট স্নায়ুতন্ত্র গুলো শুকিয়ে যায় যার ফলে ঘুম কম হয় বা ঘুম হয় না।
১৪। শরীরের রোগবালাই সৃষ্টি
মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ব্রেন, মাথা, গলার টিউমার হতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে রেডিয়েশনের ফলে মাথায় ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে আবার গলায় টিউমার হতে পারে। এজন্য আমরা মোবাইল ফোনের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
১৫। হার্টের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব
মোবাইল ফোন দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের কারণে স্মৃতিশক্তি এবং হার্টের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় মানুষ চিন্তায় থাকে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারেনা। যার ফলে দেহের ওপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব সহ হাটের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারিত হয়।
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত যা কিছু বলা হয়েছে এতে আমি মনে করি সব সময় চেষ্টা করা উচিত মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করা। এই আর্টিকেলে মোবাইল ফোনের ১৫ টি ক্ষতিকর দিক বলা হয়েছে। আমার না জানা আরো অনেক রোগ বালাই আছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে সে সকল রোগবালায় আমাদের শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই আমরা সকলেই মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার করার চেষ্টা করব।