জ্বর নিয়ন্ত্রণ ঘরোয়া উপায়

আবহাওয়া পরিবর্তনের পরেই দেখা যায় ওষুধের দোকান বা ডাক্তার খানায় জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় হতে শুরু করে। মানুষের শরীরে তাপমাত্রা বেশি আবার কারো শরীরে তাপমাত্রা কম হয়ে যাওয়া সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি মেডিকেলগুলো তো জ্বর সর্দি বা কাশি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ভিড় হতে শুরু করে। আবহাওয়া জ্বর হয়। এটি ভাইরাসজনিত কারণে হতে পারে।

সূচিপত্র

জ্বর হওয়ার কারণ

প্রাকৃতিকভাবে যখন আবহাওয়া পরিবর্তন হয় ওই সময় আমাদের সবারই সতর্ক হওয়া উচিত। কারন আবহাওয়া পরিবর্তন হলে মানুষের শরীরে অনেক ধরনের রোগের আঘাত হানতে পারে। গরমের সময় শরীর অনেক তাপমাত্রা হয়ে থাকে কিন্তু আবহাওয়া যখন পরিবর্তন হয় তখন সাথে সাথে আমাদের দেহের তাপমাত্রা পরিবর্তন হতে থাকে। এই সময় আমাদের সবারই উচিত সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা 

দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত

মানবদেহে সাধারণভাবে স্বাভাবিক তাপমাত্রা 97 ডিগ্রী ফারেনহাইট। মানব দেহের এই তাপমাত্রা যখন ১০০ ডিগ্রি পার হয়ে যায় তখন তাকে জ্বর বলা হয়। আমাদের দেহে 103 ডিগ্রি তাপমাত্রা পার হয়ে গেলে খুবই সতর্ক হতে হবে এবং ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এই জ্বর স্বাভাবিক না হতে পারে। আমাদের দেহে জ্বর হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এমন কোন বিষয় না। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ভাইরাস জনিত জ্বরটা হলে জ্বর ভালো হওয়ার জন্য ওষুধ না খেলেও হবে। 

আপনি যদি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করেন তাহলে আপনি নিজে জ্বর আয়েত্তে পারবেন। এই ভাইরাসজনিত জ্বর টি তিন থেকে চার দিনের মধ্যে এমনি সেরে যেতে পারে। আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাবেন না।

জ্বরের লক্ষণ

আমাদের মানবদেহে জ্বর হওয়ার আগেই শরীরে জানতে পারি জ্বর হতে পারে। কেননা যখন শরীরের জ্বর হয় তখন তার আগে থেকেই খুসখুসে কাশি এবং শরীরে টাইপের ভাব হতে থাকে। জ্বরের লক্ষণগুলো হলোঃ
  • দৈনিক দেহের ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি হয়।
  • শরীরে হঠাৎ কাঁপুনি দেয় এবং অনেক ঠান্ডা অনুভব হয়।
  • সারা শরীর ব্যথা করে এবং হাঁটু কোন এবং হাত জয়েন্ট গুলো ব্যথা অনুভব হয়।
  • হঠাৎ করে অনেক মাথা ব্যথা শুরু হয়।
  • আবার হঠাৎ করেই খুব গরম লাগে এবং শরীর ঘেমে যায়।
  • রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • সারা মুখ এবং চোখের ভেতরের লাল হয়ে যায়।
  • চোখ অনেক জ্বালাপোড়া অনুভব হয় এবং জল পড়তে থাকে।
  • শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়।
  • কোন খাবার খেতে মন চায় না।
  • শিশুদের খুশখুসে কাশি,বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

মাথায় পানিপট্টি

অতিরিক্ত মাথা গরম হলে বা শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে জলপট্টি দিন। একটি পাত্রে পানি নিয়ে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড় ভিজিয়ে ২-৩ মিনিট মাথায় দিয়ে রাখুন। তাহলে জ্বরের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে কমে আসবে। এইভাবে দিতে থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যে অনেক আরাম পাবেন এবং শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে।

জ্বর হলে তুলসী পাতার ব্যবহার

জ্বর কমানোর জন্য নানান উপায় রয়েছে তার মধ্যে একটি উপাদান হল তুলসী পাতা কারণ তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিবায়োটিক উপাদান। যা সর্দি গলা ব্যথা জ্বর এর মত বহু রোগের সহায়তা করে থাকে তুলসী পাতা। তুলসী পাতায় শরীরের তাপমাত্রা কমতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে সে জন্য আপনাকে তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে একটু ঠান্ডা করে খেতে হবে।

মধু জ্বর কমাবে

আপনি এছাড়াও জ্বর কমানোর জন্য মধু খেতে পারেন। জ্বর কমানোর আরেকটি উপাদান হল মধু। জ্বর কমানোর জন্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে উপাদান তৈরি করে খেয়ে নিতে পারেন।

জ্বরের জন্য উপকারী যষ্টিমধু

জ্বর কমানোর জন্য যষ্টিমধু অনেক কার্যকরী কারণ এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে এই যষ্টিমধুতে। আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে এই যষ্টিমধু। নাম ক ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করে শরীরের প্রোটিন তৈরি করে এবং সংক্রমণ থেকে শরীরের রক্ষা করে তাই জ্বর কমানোর জন্য উপাদান গুলির মধ্যে এটি একটি অন্যতম উপাদান।

কুসুম পানি দিয়ে গোসল

জ্বরের জন্য শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে কুসুম গরম পানি করে গোসল করুন। তাহলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে। কুসুম পানি দিয়ে গোসল করলে দেহের রক্ত প্রবাহ প্রভাব পড়বে এবং শরীরের ত্বক শীতল হয়ে কাঁপুনি শুরু হতে পারে।

স্পঞ্জ বাত

জ্বরের জন্য স্পঞ্জ বাত নিতে পারেন। শরীরে যেগুলো অংশ অতিরিক্ত গরম হয় যেমন বগল ও কুশনির মত তাপমাত্রা জায়গাতে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিবেন এতে তাপমাত্রা কমে আসবে।জ্বর হলে যদি গোসল করতে মন না চায় তাহলে আপনি ঘাড় ও কপাল ঠান্ডা পানি দিয়ে নরম কাপড় ভিজিয়ে সেক দিলে আপনার জ্বর কমবে।

গুড়া মরিচ এবং খাবার পানি

আপনার শরীরে জ্বর আসলে খাবারের ভেতরে বেশি মরিচের গুঁড়া দিতে পারেন। মরিচের গুঁড়ার মধ্যে একটি উপাদান হল ক্যাপসাসিন এটি আমাদের শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমিয়ে দেয়।শরীরের জ্বর আসলে আপনার শরীর জল শূন্য হতে পারে সেই জন্য আপনি দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করেন।

জ্বর আসলে কমলালেবুর রস অথবা ভিটামিন সি ফলের রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় কারণ ভিটামিন সি আমাদের ইউনিয়ন সিস্টেম সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে।

শেষ কথা

বর্তমানে আবহাওয়া জনিত কারণে বা এমনিতেও যদি জ্বর আসে তাহলে এটা এখন ভাইরাসজনিত জ্বর যা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবারই জ্বরের কারণে অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন পর সেরে যায়। এরকম সময়ের মধ্যে জ্বর হলে বিশেষভাবে ওষুধ খাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। উপরোক্ত যেসব জ্বরের জন্য যেসব উপাদান বলা হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করলেই শরীর খুব দ্রুত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url