OrdinaryITPostAd

হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়

মানুষ যখন অতিরিক্ত টেনশন করে অর্থাৎ হাইপারটেনশন হাই প্রেসার নামে পরিচিত। চিকিৎসকদের মতে বলা যায় হৃদরোগ,স্ট্রোক,কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একমাত্র কারণ হলো অতিরিক্ত মাত্রায় প্রেসার বেড়ে যাওয়া। অতিরিক্ত মাত্রায় প্রেসার বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু প্রেসার বেড়ে গেলে ঘরোয়া উপায়ে প্রেসার কমানো যায়।
প্রেসার বেড়ে গেলে ঘরোয়া উপায় কিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়, সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।

সূচিপত্র

হাই প্রেসার কি

সাধারণভাবে মানুষ যখন সুস্থ থাকে তখন তার পেশা থাকে ১২০/৭০ থেকে ১৪০/৯০ এর ভিতর। স্বাভাবিকভাবে যখন মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন করার সমস্যা হয় তখন প্রেসার বেড়ে যায়। মানুষের শরীরে সারাদিন উচ্চ রক্তচাপ ওঠানামা করে থাকে।

হাইপ্রেসার হওয়ার কারণ

মানুষের শরীরে বিভিন্ন কারণে প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। যেমন অতিরিক্ত চিন্তা,অতিরিক্ত লবণ খেলে উত্তেজনা, অতিরিক্ত মাত্রায় মধ্য পান করলে দেহে পেশার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

হাই প্রেসার হওয়ার লক্ষণ

বেশিরভাগ মানুষের হাই প্রেসার রোগীদের কোন ধরনের লক্ষণ বোঝা যায় না। কিন্তু অনেক মানুষের মধ্যে প্রেসারের জন্য বুক ব্যথা হয়,শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয়,মাথাব্যথা এবং হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত দেখা যায়।
  • শরীরের উচ্চ রক্তচাপ শ্বাস নিতে অসুবিধা করে।
  • অতিরিক্ত মাথা ব্যথায় ব্লাড প্রেসার এর লক্ষণ হতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা দেখা যায়।
  • প্রেসারের কারণে বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলে মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
  • উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়।

হাই প্রেসার কমানোর ১০ টি উপায়

  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন করা
  • ধূমপান বন্ধ করা
  • কাচা লবণ খাওয়া কমিয়ে দেওয়া
  • পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া
  • রসুন খাওয়া
  • মধু ও পিয়াজের রস
  • মেথি
  • গোলমরিচ

নিয়মিত ব্যায়াম করা

ব্যায়াম হল মানুষের আত্মার সঙ্গী। একজন মানুষ যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে ও শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করে তাহলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। আপনি যদি প্রত্যেকদিন আধা ঘন্টা ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। ব্যায়াম হলো হাই প্রেসারের অন্যতম সেরা একটু উপায়। ব্যায়াম প্রেসার কমানোর জন্য এবং হার্টের উন্নতি করতে সাহায্য করে। দৈনন্দিন জীবনে হাই প্রেসার রোগীদের ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা প্রয়োজন।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

যেসব রোগীদের হাই প্রেসার রয়েছে,তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। কারণ হলো ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে রক্তচাপটাও প্রায় শরীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার জন্য অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঘুমানোর সময় রক্তচাপ,শ্বাসকষ্ট অনেক সমস্যা দেখা দেয়। সেজন্য প্রেসার কমানোর জন্য একটি কার্যকারী উপায় হল ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন করা

আপনি যখন অতিরিক্ত চিন্তাভাবনায় পড়ে থাকবেন তখন আপনার হাই প্রেসার হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তাই আপনার মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন করতে হবে। আপনি যদি হাই প্রেসার হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট মেডিটেশন করা প্রয়োজন। 

মেডিটেশন করলে চিন্তা থেকে আপনাকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার শরীরের রক্তচাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। মেডিটেশন করা মানসিক চাপ কমানোর জন্য অন্যতম কার্যকরী।

ধূমপান বন্ধ করা

হাই প্রেসার রোগীদের জন্য ধূমপান মারাত্মক ক্ষতিকর। সেই জন্য হাই প্রেসার রোগীদের অ্যালকোহল এবং ধূমপান না করাই উচিত। অ্যালকোহল ও ধূমপান মানুষের শরীরে রক্ত। সঞ্চালন থেকে বন্ধ করে রক্ত সঞ্চালন না হলে রক্তচাপ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। সেই কারণে ধূমপান, অ্যালকোহল হার্টের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

কাঁচা লবণ খাওয়া কমিয়ে দেওয়া

বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকবার গবেষণা করে দেখেছে, অতিরিক্ত পরিমাণ কাঁচা লবণ খেলে স্ট্রোক সহ হাটের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁচা লবণ খাওয়া যাবেনা। কাঁচের লবণ খাওয়ার কারণে আপনার প্রেসার অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। হাই প্রেসার রোগীদের জন্য কাঁচা লবণ খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন ৫গ্রাম লবণ খাওয়া যেতে পারে।

পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া

আপনাকে এমন খাবার খেতে হবে যে খাবারের মধ্যে পটাশিয়াম এর পরিমাণ বেশি থাকে। পটাশিয়ামযুক্ত খাবার প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেতে থাকেন তাহলে প্রসবের মাধ্যমে লবণগুলো বেরিয়ে যাবে। হাই প্রেসার রোগীদের দৈনন্দিন কিছু না কিছু পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

রসুন খাওয়া

মানুষের শরীরে শারীরিকভাবে যখন রক্ত সঞ্চালন সমস্যা দেখা দেয় তখন প্রেসার বেড়ে যায়। রসুন শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। রসুন কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, তাই হাই প্রেসার কমানোর জন্য রসুন খেতে পারেন। শরীরের উচ্চ রক্তচাপ হলে প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন।

মধু ও পিয়াজের রস

নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পেঁয়াজের রস অত্যন্ত জরুরী। পিয়াজ খেলে আপনার রক্ত পরিষ্কার এবং স্নায়ুতন্ত্রকে অনেক শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই হাই প্রেসার থাকলে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ পেঁয়াজের রস এবং মধু মিশিয়ে দুই চামচ খেলে হাই প্রেসার কমে যায়।

মেথি

আপনার যদি ব্লাড প্রেসার হয়ে থাকে তাহলে আপনি বাসায় মেথি নিয়ে এসে রাখতে পারেন। সারারাত মিথি ভিজিয়ে রেখে সকালে সে জল পান করলে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

গোলমরিচ

আপনার যদি অতিরিক্ত পরিমাণ হাই প্রেসারের সমস্যায় ভুগেন তাহলে আপনি প্রতিদিন কালো মরিচের গুড়া একটা চামচ নিয়ে নিন। হালকা কুসুম গরম করে দুই এক ঘন্টা ভিজিয়ে সেই জলটি পান করুন। আপনি উপকার পাবেন।

হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য খাবারের তালিকা

  • কলা
  • পালংশাক
  • বিটরুট
  • কমলালেবুর রস

কলা

দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেখানেই যাই না কেন কলা পাওয়া যায়। কলা এমন একটি ফল যা খুব সহজে পাওয়া যায় এবং সবাই এটি পছন্দ করে। পটাশিয়ামযুক্ত কলা যা আপনার রক্তচাপ কমানোর জন্য সহায়তা করে।

পালংশাক

পালং শাক এটিও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার। এই খাবারটি অনেকে পছন্দ করে না কিন্তু এই শাক স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত উপকারী। সবুজ সাতটিতে রয়েছে ক্যালোরি কম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ফাইবার বেশি,এর মত ভরপুর পুষ্টি। এই সাতটি রক্তচাপ মাত্রা কমায় এবং নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মূল উপাদান।

বিটরুট

এটি লাল রংয়ের সবজি। এই সবজিতে পটাশিয়ামের ভরপুর। ৩২৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে সবজিতে। পটাশিয়াম বাদেও মাঙ্গানিজ,ভিটামিন সি এবং আইরন রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান গবেষণায় বলেছেন, এক গ্লাস বিটরুট এর রস পান করলেই হাই প্রেসার কমানো সম্ভব হয়ে থাকে।

কমলালেবুর রস

কমলালে বউ একটি ভিটামিন যুক্ত খাবার। হাই ব্লাড প্রেসার রোগীদের জন্য অবশ্যই এই ফলটি খেতে পারেন, খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। ফলটি যদি আপনি নিয়মিত খান তাহলে অবশ্যই উপকার পাবেন।

হাই প্রেসার হলে আমাদের সাধারণত কি করা উচিত

হাইপ্রেসার হলে আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কাচা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কোন ধরনের নেশাদ্রব্য পান করা যাবে না অর্থাৎ ধূমপান বন্ধ করতে হবে। আপনাকে একটি খাবারের তালিকা করতে হবে এখানে তালিকায় বেশিরভাগ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার থাকতে হবে এছাড়াও অতিরিক্ত মাত্রায় হলে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথা

আপনি যদি হাই প্রেসার রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই উপরোক্ত আর্টিকেলটি পড়ে আপনার উপকারে আসবে। এর জন্য অনেক ধরনের খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে আপনাকে রেগুলার মেডিটেশন ও ব্যায়াম আপনার অত্যন্ত জরুরী। উপরোক্ত যেগুলো খাবার খেতে বলা হয়েছে এবংযেগুলো খেতে বলা হয়নি সেগুলো অবশ্যই মেনে চলা চেষ্টা করুন। নিজে সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪