তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের পর ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন,তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের পর ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। ভয়াবহ কারণ সাক্ষী হয়েছেন তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের। ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ কেন ও কি এগুলো বিষয়ে এই পোস্টে আরও বিস্তারিত থাকছে। এই পোস্টে আরো থাকছে তুরুষকে কারণটা কি দাঁড়িয়েছিল।
তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের পর ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ কেন তার কারণটা নিম্নে বিস্তারিত জেনে নেই।

সূচিপত্রঃ

ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কিভাবে হয়?

এটি হল মাটির ভেতরে সৃষ্ট প্লেট গুলো কৃত্রিম বা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। প্লেটগুলো মাটির ভিতরে চাপা থাকার জন্য যখন একে অপরের সংস্পর্শে আসে এবং ঘর্ষণ সৃষ্টি করে তখন আমাদের ভূপৃষ্ঠে প্রচন্ডভাবে কম্পন সৃষ্টি করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত ৫-৭০০ কিমি গভীরতায় উৎপত্তি হয়।

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প এত ভয়াবহ কেন?

বিশ্বজুড়ে অন্যতম ভয়াবহ সাক্ষী হয়ে উঠেছে তুতুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের।৭.৮ মাত্রারর ভূমিকম্পকে এই দশকের সবচেয়ে মারাত্মক হিসেবে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষকরা বলছে পূর্ব আনাতোলিয়ান ফ্রন্টে সংঘর্ষের কারণে এই ভয়াবহসৃষ্টি হয়েছে। আনাতোলিয়ান এবং আরব প্লেটের মধ্যে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ফাটল রয়েছে। কিন্তু এই আনাতোলিয়ান ফ্রন্টে কেন হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল তোর কি শহরের নূর দাগি থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে পূর্ব আনাতোলিয়ান ফন্টের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে।

ভূমিক উত্তর-পূর্ব দিকে ত্বরান্বিত করে তুরস্কের মধ্যভাগ এবং সিরিয়ায় আঘাত হানে। ২০ শতকের সময় পূর্ব আনাতোলিয়ান ফ্রন্টে মত কার্যকলাপ দেখা দেয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে এই অঞ্চলে ১৯৭০ সাল থেকে রিকটার স্কেলে ছয় মাত্রার ওপরে মাত্র তিনটি ভূমিকম্প হয়েছে। তবে ১৮৮২ সালে সাত মাত্রার ভূমিকম্প এই অঞ্চলে প্রায় বিশ হাজার মানুষ মারা যায়। গড়ে যেকোনো বছরে সাত মাত্রার বেশি ২০ টির ও কম হয়।

তবে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের 7.8 মাত্রার ভূমিকম্প তা ছাড়িয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ইনস্টিটিউট ফর রিস এন্ড ডিজিস্টার্ড এর প্রধান বলেন ২০১৬ সালে ইতালির মধ্যাঞ্চলে ৬.২ মাত্রা ভূমিকম্পের প্রায় ৩০০ জন মৃত্যুবরণ করেন। সে হিসেবে তুলনা করলে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের সীমান্তে আঘাত আনা ২৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী। ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যে মাত্র দুইটির মাত্রা ছিল সোমবারের ভূমিকম্পের সমান।

এবারের ভূমিকম্প এত গুরুতর কেন

বিজ্ঞানীরা সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের জন্য পূর্ব আনাতলিয়ান ফন্টের কথা বলেছেন। এই আনাতুলিয়ান ফল্ট আসলে কি? সর্বপ্রথমে আমরা বলে নি সবচেয়ে বড় কারণ যে কোন স্থানের ফল্ট লাইন। এই ফল্ট লাইন হল পৃথিবীর বাইরের যে আবরণ বা ভূত্বকের বিশাল খন্ড রয়েছে তা টেকটনিক প্লেট বলা হয়। আর দুটি টেকটনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্টলাইন বলা হয়। পূর্ব আনাতুলিয়ান ফল্ট এর অবস্থান এরাবিয়ান প্লেট ও আনাতোলিয়ান প্লেটের মাঝে। ফল্ট লাইন দিয়ে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে এই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন পূর্ব আনাতুলিয়ান ফল্ট এর মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়ে এই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর পশ্চিম বরাবর এই ফল্টের অবস্থান। কঠিন শিলা প্লেটগুলো একটি উলম্ব ফল্ট লাইন জুড়ে একে অপরের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে। যখনই এটি অনুভূমি গতিতে স্লিপ করে তখন প্রচন্ড শক্তি নিয়ে ভূমিতে ধাক্কা দেয়। তখন এই সূত্রপাত ঘটায়। এর জন্য তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের এই ভয়াবহ সৃষ্টি হয়।

যার ফলে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের সোমবারে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের কারণে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন এবং হাজার হাজার বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প গুলোর মধ্যে একটি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের মাটির নিচে থাকা এরাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে গিয়ে আনাতোলিয়ান প্লেটে ধাক্কা দিলে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পটি সৃষ্টি হয়। বহু তত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের মত ভয়াবহ ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। ভূতত্ত্ববিদ বলছেন উত্তরের তিব্বত সাব প্লেট ইন্ডিয়ান প্লেট এবং দক্ষিণে বার্মা সাব প্লেট এর সংযোগ স্থলে বাংলাদেশের অবস্থান।

ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন বাংলাদেশ সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব অঞ্চলে বড় ধরনের সৃষ্টি হওয়ার কারণ রয়েছে। এর জন্য সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চল অনেক ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করে জানা গেছে ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে দীর্ঘদিন ধরে শক্তি জমা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত সেই প্লেটে কোন রকমের ধাক্কার সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে সেখানে হাজার বছর ধরে শক্তি উৎপন্ন হয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসছে। তাই সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে তাতে আট মাত্রার কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্ব দিকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। এসব অঞ্চলে হলে ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বাংলাদেশে যদি হয় ঢাকা শহরটি ধ্বংসস্তূ পরিণত হবে। ধারণা করা হয়েছে বাংলাদেশের যদি হয় ঢাকা শহরের প্রায় দেড় লক্ষ বাড়িঘর মাটির সাথে তলিয়ে যাবে।

ভূমিকম্পের সময় করণীয়

ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পারার সাথে সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে ফাঁকা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। ধীর স্থির থাকতে হবে।বাড়ির বাইরে থাকলে বাড়ির ভেতরে ঢোকা যাবেনা। একতলা ভবন হলে ভূমিকম্পের সময় দৌড়ে বাহিরে বের হয়ে আসতে হবে। বহু তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর ভেতরে থাকলে টেবিল বা খাটের নিচে চলে যেতে হবে। এক জায়গায় অনেক মানুষ একসাথে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। আশেপাশে কোন কাচের তৈরি জিনিস থাকলে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

এই সময় বহুতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং থেকে নামার সময় লিফট কোনোমতে ব্যবহার করা যাবে না। উচু ভবনের জানালা বা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নামার চেষ্টা করা যাবে না। মাটি ভূ গর্ভস্থানে ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে এমন কোন উঁচু জায়গা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। নিজেদের ফোনে ফায়ার সার্ভিস এবং প্রয়োজনীয় নাম্বারগুলো সংগ্রহ করে রাখতে হবে এতে আপনি বিপদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে কল দিয়ে জানিয়ে দিতে পারবেন।ভূমিকম্পের সময় বাসার ভেতরের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যাসের লাইন খুলে রাখতে হবে।

এই সময় নিজেকে বাঁচাতে মাথার উপর শক্ত করে বালিশ অথবা অন্য কোন শক্ত বস্ত যেমন কার্ডবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলী ধরে রাখতে হবে।এই সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি থেকে নেমে ফাঁকা কোন স্থানে অবস্থান করতে হবে। একবার হওয়ার পর আরো ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে থাকে যাকে আফটার শখ বলা হয়। তাই পরের কয়েক ঘন্টা ফাঁকা স্থানে এবং নিরাপদ জায়গায় থাকতে হবে।

শেষ কথা

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের প্রায় এক ঘন্টা পূর্বে পশু পাখির ডাকের অনেক আনাগোনা ছিল। তারপরে যা হয়েছে বলার ভাষা নেই। প্রাকৃতিকভাবে কোন দুর্যোগের আগে পশু পাখিরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন বাংলাদেশ সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব অঞ্চলে বড় ধরনের সৃষ্টি হওয়ার কারণ রয়েছে। তাই ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। ভূমিকম্প বিষয় জানার জন্য আশা করি আপনার আর্টিকেলটা উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url