নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আমরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। যারা নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানেন না আমরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে এগুলোর বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য দিব ইনশাআল্লাহ।
চলুন দেরি না করে জেনে নেই নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত।

সূচিপত্রঃ নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ

ভূমিকা - নামাজ ও অজু ভঙ্গের বিস্তারিত 

মুসলিম জাতির জন্য নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নামাজকে ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ বলা হয়। নামাজের বিষয়ে মুসলিম জাতিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় এবং প্রতিটি মুমিনের জন্য একান্তে কর্তব্য হচ্ছে নামাজের সর্তকতা। নামাজের স্থান ঈমানের পরে। নামাজ বেহেস্তের চাবি। কষ্ট করে নামাজ পড়ে যদি নামাজ কবুল না হয় তাহলে নামাজ পড়ে কোন লাভ নেই। তাই নামাজ সম্পর্কে জানতে হবে এবং নামাজ ভঙ্গের কারণ জানতে হবে। আরো আমাদের জানতে হবে অজু সম্পর্কে অজু যদি সঠিক না হয় তাহলে নামাজ হবে না।

আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা বিস্তারিত জানুন

অতএব নাম্বার নামাজ ভঙ্গের কারণ এর সাথে সাথে অজু ভঙ্গের কারণ ও জানতে হবে। সহি নিয়মে অজু করা এবং সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করা আমাদের সকলেরই জানা উচিত তাই আমরা আজকের প্রশ্নের মাধ্যমে নামাজ ভঙ্গের কারণ অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের সবাইকে জামাতের সাথে সঠিক নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুক।

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আল্লাহ সুবহানুতায়ালা এর ইবাদতের জন্য মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালার সকল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হল নামাজ। নামাজ কালিমা শাহাদতের স্বীকৃতির বড়ই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আর নামাজে অলসতা কারীদের মধ্যে শ্রেণীভেদ রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ এমন যে কখনো নামাজ আদায় করে না এটি একটি কুফর। তাদের মধ্যে কেউ নামাজের ব্যাপারে অলসতাকারী।, নামাজ হলো ইসলামের বৃহত্তম নিদর্শন ও প্রতীক। মুসলিম জাতির জন্য নামাজ একটি ফরজ ইবাদত।

আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত বিস্তারিত জানুন

নামাজের সাথে আমাদেরকে সবসময়ই জড়িত থাকতে হবে এবং নামাজ আদায় করলে সব সময় জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। নামাজ বেহেস্তের চাবিকাঠি। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার আমরা এবাদত করে থাকি আর আমরা সকলেই জানি আল্লাহতালার ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহতালা যদি খুশি হন তাহলে আমরা খুব সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারব।

নামাজ ভঙ্গের কারণ

সকল মুসলিম ভাই-বোনকেই নামাজ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। যে সকল কাজের মাধ্যমে নামাজ ভঙ্গ হয় বা নষ্ট হয় তাকে ‘মোফছেদাতে, নামাজ বলে। এই ধরনের কাজ করলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। আমরা মুসলিম এবং একজন মুসলিম হিসেবে সবারই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করা সর্বত্রম এবং দায়িত্ব। কারন আমাদের মনে রাখা উচিত আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর সবার আগে আমাদের এই নামাজের হিসাব নিবেন। আমরা নামাজের সঠিক নিয়ম এবং নামাজ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানিনা। নিম্নে নামাজ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হল।

  • নামাজে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে যদি তেলাওয়াত অশুদ্ধ বা ভুল পড়ার কারণে অর্থ আলাদা হয়ে গেলে নামাজ হবে না।
  • নামাজের ভেতরে কোন রকম কথা বললে নামাজ হবে না সেটা হোক কোন অক্ষর বা তার কোন বেশি।
  • নামাজরত অবস্থায় কাউকে সালাম দিলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • নামাজরত অবস্থায় কেউ সালাম দিলে তার উত্তর নিলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • নামাজের মধ্যে কোন ধরনের উফ আহ শব্দ করা যাবে না এই ধরনের আওয়াজ করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • নামাজরত অবস্থায় কেউ যদি ইচ্ছা করে বা প্রয়োজন ছাড়াই কাশি দেয় তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • নামাজেরত অবস্থায় কেউ যদি কোন প্রকার অসামাজিক অঙ্গী ভঙ্গি দেখায় তার কারণ নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • দুনিয়ার কোন বিপদ মনে স্মরণ করে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • তিন তাসবীহ পরিমাণ সতর খুলে রাখা। তিন তাসবিহ সময় পর্যন্ত যদি কেউ তার সতর খোলা রাখে তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • যারা ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে তাদেরকে মুক্তাদি বলা হয়। তারা ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে লোক লোকমা নিলে নামাজ নষ্ট হবে।
  • নামাজরত অবস্থায় কেউ যদি তাকে এসে কোন ধরনের সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ শুনে তার কোন উত্তর দেয় তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • নামাজি ব্যক্তি যেই জায়গাটুকু নিয়ে নামাজ পড়বে সেই জায়গাটুকু পাক-পবিত্র থাকতে হবে যদি কোন অপবিত্র জায়গায় সেজদা করে তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
  • নামাজি ব্যক্তি যদি কেবলার দিক থেকে বুক সরে যায় তাহলে নামাজ নষ্ট হবে।
  • নামাজের মধ্যে কোরআন শরীফ দেখে দেখে তেলাওয়াত করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • নামাজি ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে শব্দ করে হাসে তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
  • নামাজরত অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার কাছে দুনিয়াবী কোন কিছু প্রার্থনা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • নামাজরত অবস্থায় কোন কিছু খাইলে,পান করলে বা দাঁতের ফাঁকে কোন কিছু আটকে থাকা খাবার খেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • নামাজরত অবস্থায় কেউ যদি হাঁচির জবাব দেয় আলহামদুলিল্লাহ বা ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • নামাজরত অবস্থায় মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমাম সাহেবের আগে চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

অজুর গুরুত্ব ও ফজিলত

আল্লাহ সুবহানুতায়ালা এর ইবাদতের জন্য মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালার সকল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হল নামাজ। সেই নামাজ বা সালাতের পূর্বশর্ত টি হল অজু। ফজল ছাড়া নামাজ হয় না। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাজিআল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেন, জান্নাতের চাবি হলো নামাজ আর নামাজের চাবি হলো অজু ।‘তিরমিজি,তাহলে বলা যায় যে জান্নাতের চাবিকাঠি হল অজু। অজু ছাড়া নামাজে অংশগ্রহণ করা হয় না। অজু মানুষকে আলোকিত করে।

আরো পড়ুনঃ রমজান মাস রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস সম্পর্কে হাদিস

কিয়ামতের ময়দানে ওই উম্মতগুলোর অজুর অঙ্গ গুলো উজ্জ্বল থাকবে, তার কারণে তাদের উম্মতদের আলাদা করা সহজ হবে। অতএব আমাদের সকলেরই উচিত অজু কে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা দেওয়া। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত তরিকায় ওযু করার চেষ্টা করা। তার কারণ প্রিয় নবীজি কেয়ামতের ময়দানে তার উম্মতদেরকে অজুর অঙ্গ গুলোর উজ্জ্বলতা দেখে চিহ্নিত করবেন। তাদেরকে হাউসে কাউসারের পবিত্র পানি দ্বারা আপ্যায়ন করে নিবেন।

অজু ভঙ্গের কারণ

আমাদেরকে সব সময় সহীহ বিষয় জানতে হবে কারণ এগুলো ভুল হলে আমাদের পাপ হবে। তাই অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে সঠিক টাই জানতে হবে আমরা জানি নূরানী মাদ্রাসা গুলোতে পড়ানো হয় অজু ভঙ্গের কারণ সাতটি। নামাজ যেমন বেহেস্তের চাবি তেমনি নামাজের চাবি হচ্ছে অজু। নিম্নে অজু ভঙ্গের কারণ বিস্তারিত দেওয়া হল।

  • প্রস্রাব বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • রক্ত, পুজ বা পানি গড়িয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • মুখ ভর্তি বমি বা তার বেশি পরিমাণে হলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • থুথুর সঙ্গে রক্ত সমান পরিমাণে বের হলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে
  • চিৎ হয়ে, কাত হয়ে, হেলান দিয়ে, বা কারো সাথে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে অজু ভেঙ্গে যাবে।
  • পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে
  • নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

শেষ কথা

আশা করি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন যদি আমাদের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করে পৌঁছে দিন যেন তারাও এই বিষয়ে জানতে পারি। ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url