রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ - রোজার মাসের ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক রমজান মাস আমাদের জন্য অনেক বড় একটি নিয়ামত। রমজান মাসে রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ না জেনে অনেকে রোজা থাকে। রোজা থাকতে হলে আপনাকে প্রথমে রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। রোজার মাসের ফজিলত সম্পর্কে জানতে হবে। রমজানের এই এক মাস আমাদের জন্য নিয়ামতের মাস।
রোজার মাসে ফজিলত অনেক। রমজান মাসে শুধু রোজা থাকলে হয় না। রোজার কিছু নিয়ম নিয়ত মেনে রোজা থাকতে হয়। তাহলে রোজা পবিত্রতার সহিত পালন করতে পারব।

সূচিপত্রঃ রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ - রোজার মাসের ফজিলত

ভূমিকাঃ রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ না জেনে কখনো রোজা থাকা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলার অশেষ নেয়ামতি হলো রমজান মাস। এ রমজান মাসে আমরা অনেকে রোজা থেকে কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় তাই জানিনা। আবার অনেক সময় রোজার নিয়ত ছাড়াই রোজা থেকে যায়। এতে সারাদিন শুধু উপোস পারায় হবে। রোজা থাকার জন্য সেহরির পরে রোজার নিয়ত করতে হবে।নিয়ত ছাড়া কখনো রোজা সম্পন্ন হবে না। আল্লাহ তায়ালা এই রমজান মাসে প্রত্যেকটি ব্যক্তির জন্য নিয়ামত নিয়ে আসে।

আরো পড়ুনঃ নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ জেনে নিন 

আমরা অনেকে আছি যারা রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি ব্যক্তির জন্য পূণ্যের দরজা খুলে দেয়। আর পাপের দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন। রমজান মাসে তোমরা যদি কোন নেকির কাজ করো তাহলে তোমাদের তিনগুণ নাকি সব দেওয়া হবে। আর যদি কোন পাপের কাজ করো। তার ক্ষেত্রেও সেটি তিন গুণ বেড়ে যাবে। রমজান মাসে রোজা থাকার সময় প্রত্যেকেরই উচিত রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ জেনে নেওয়া। চলুন আমরা রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ

  • ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু পান করলে।
  • স্বামী স্ত্রীর সহবাস করলে।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খেলে।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে।
  • ধূমপান করলে।
  • অধিক পরিমাণে রক্ত পুজ বের হলে।
  • দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাবার খেয়ে ফেললে।
  • থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে।
  • কানের নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল কিছু বের হলে।
  • রোজা অবস্থায় ঔষধ খেলে।

রোজা ভঙ্গ না হওয়ার কারণ

শরীর থেকে রক্ত বের হলে, স্বপ্নদোষ হলে, রক্ত দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে বলেছেন, তিনটি কারণ কখনো রোজা ভঙ্গ করবে না। স্বপ্নদোষ,বমি, রক্ত দিলে। ফিকহুস শুনানি ওয়াল আসারী

  • ইচ্ছার বিরুদ্ধে বমি হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। ‘তিরমিজি’
  • রক্ত দেওয়ার পর শরীর দুর্বল হয়ে গেলে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। ‘বুখারী’
  • সুগন্ধি কোন আতর, সুরমা ইত্যাদি দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। ‘ফিকহুস শুনানি’
  • মশা, মাছি, ধুলাবালি, পোকামাকড় ইত্যাদি ভুল করে গলায় গেলে রোজা ভঙ্গ হবে না। ‘ইবনু আবি সাইবা, আল মুসান্নাফ’
  • ভুল করে কোন কিছু পান করলে তো রোজা ভঙ্গ হবে না। ‘মুসলিম’
  • মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • রোজা অবস্থায় বেহুশ, অজ্ঞান হলে রোজা ভাঙ্গা হবে না ।
  • খাবার নষ্ট হয়ে গেছে কিনা তা দেখার জন্য ঘ্রান নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • রোজা থাকা অবস্থায় নখ বা চুল কাটলে রোজা ভাঙ্গা হবে না।
  • হাতে মেহেদি দিলেও রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • স্বামী স্ত্রী সহবাস ছাড়া একত্রে থাকলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • স্বামী স্ত্রী সহবাস করলেও কোন সমস্যা হবে না। তবে সহবাসের পর গোসল না করে সেহরি খেলে ফজর হওয়ার পর গোসল করলে কোন সমস্যা হবে না।
  • একের অধিক বার গোসল করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • ইনহেলার বা অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

রমজান মাসের ফজিলত

কোন ব্যক্তির রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে ধারণা থাকলে সে ব্যক্তি প্রতিবছর শুধু রমজান মাসের আশায় বসে থাকবে। অনেকে আছি আমরা যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি না। তারা এই রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। শুধুমাত্র রমজান মাসের ফজিলত এর কারণে। আমরা ১২ মাস পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করব। কেন না নামাজের ফজিলত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যা আপনাকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দিবে।

আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত বিস্তারিত জানুন

আল্লাহ তাআলা রোজার মাসের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন।যে ব্যক্তি সুস্থ থাকা অবস্থায় রোজা থাকবে না সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের দরজার আশেপাশেও রাখা হবে না। আমাদের উচিত রোজার মাসের ফজিলত এর গুরুত্ব বোঝার। পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত রয়েছে।

মহিলাদের নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যখন কোনো মহিলার হায়েয হয় তখন কি তারা সালাত ও সিয়াম আদায় করে না। সহিহ বুখারী তাই কোন নারীর সাইজ কিংবা নিশ্বাসের রক্ত নির্গত হওয়া শুরু হলে তার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি সেটা সূর্যাস্থের সামান্য কিছু আগে হলেও বা মাগরিবের আজানের পূর্বে হলেও ভেঙ্গে যাবে। আর এদিকে কোন নারী যদি অনুভব করে বা বুঝতে পারে যে তার নিফাসের রক্ত নির্গত হচ্ছে কিন্তু সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত রক্ত বের হয়নি তাহলে তা রোজা শুদ্ধ হবে। এবং সেদিনের রোজা তাকে কাজা করতে হবে না।

আর হায়েয ও নিফাসগ্রস্থ নারীদের রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি রোজার নিয়ত করে নেন তাহলে গোসল করার আগে ফরজ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আলেমদের মাযহাব হচ্ছে তার রোজা শুদ্ধ হবে।

যে কারণে রোজা মাকরুহ

  • প্রয়োজন ছাড়াই কোন কিছু চিবানো।
  • অযথা কোন কিছু মুখে রাখলে।
  • অজু অথবা মুখ ধোয়ার সময় মুখে পানি ঢুকলে। 
  • অন্যের কথা অন্যকে লাগানো এবং গালাগালি করলে।
  • অপবিত্র স্থানে বেশিক্ষণ সময় কাটালে। এটি খুবই গুনাহর কাজ।

অসুস্থ ব্যক্তির রোজা

অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেলে রোজা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছি ইসলাম। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তিরা পরবর্তী সময়ে কাঁচা রোজা আদায় করবেন। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।

কোন কাফের যদি ইসলাম গ্রহণ করেন। কোন বালিকা যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং কোন পাগল যদি ভালো হয়ে যায় তাহলে তারা রোজার ঘুমের আওতায় এসে যাবেন। সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে কোন কিছু পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজা কাজা করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। আগের রোজা গুলা তাদের উপর ওয়াজিব ছিল না।

আরো পড়ুনঃ রমজান মাস রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস সম্পর্কে হাদিস

মহান আল্লাহ তা'আলা যেন রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ জেনে যথাযথভাবে রোজা রাখার এবং পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত বন্দেগী করার তৌফিক দান করে। আমিন।

শেষ কথা

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ আমরা ওপরে জানলাম। রোজার মাসের ফজিলত সম্পর্কেও আমরা জেনেছি। আমাদের উচিত রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। সঠিক নিয়মে রোজা রাখা। নামাজ শুধু রমজান মাসের পড়তে হবে এমন কোন কথা নয়। নামাজ সবার জন্যই বেহেস্তের চাবি। আর এই চাবি পাওয়ার জন্য আমাদের সঠিক নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। আমাদের এই পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url