কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ - ঢিলা কুলুপ ব্যবহারের নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম, কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ এ সম্পর্কে এবং ঢিলা কুলুপ ব্যবহারের নিয়ম বিষয়ে আজকে আমরা এই পোস্টে আলোচনা করব। আপনি যদি ইস্তিঞ্জার সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে জেনে নিন কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ। আপনি যদি ইস্তিঞ্জার না করেন তাহলে পবিত্র থাকতে পারবেন না।
চলুন দেরি না করে জেনে নেই কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ ও ঢিলা কুলুপ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি একজন মুসলমান ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এ পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকার হবে।

সূচিপত্রঃ কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ

ইস্তিঞ্জা কয়টা জিনিস দিয়ে করা নিষেধ

আপনি দশটা জিনিস ব্যবহার করে ইস্তিঞ্জা করতে পারবেন না এগুলো ইসলামিক ভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। চলুন জেনে নেই এই দশটা জিনিস কি কি।

আরো পড়ুনঃ ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি - নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণ

  • কাগজ ব্যবহার নিষেধ।
  • কয়লা ব্যবহার নিষেধ।
  • হাড্ডি ব্যবহার নিষেধ।
  • কোন গাছের পাতা ব্যবহার করা যাবে না।
  • কোন ধরনের কাঁচ ব্যবহার করা যাবে না।
  • কোন ধরনের খাদ্যদ্রব্য।
  • পশুর শুকনা গোবর ব্যবহার করা নিষেধ।
  • ডান হাত ব্যবহার করা যাবে না।
  • পবিত্র জমজম কূপের পানি ব্যবহার নিষেধ।
  • কোন ধরনের ব্যবহার করা ঢিলা কুল ব্যবহার করা যাবে না।

ইস্তেঞ্জার এই দশটা সম্পর্কে আমরা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করব চলুন জেনে নেই। কি কারনে এ দশটা জিনিস ব্যবহার করা যাবে না।

কাগজ ব্যবহার-নিষেধ
আপনি যদি কাগজ ব্যবহার করেন তাহলে কাগজে বিভিন্ন ধরনের অনেক কিছু লিখা থাকে যেগুলো দ্বারা এস্তেঞ্জা করা একদমই ঠিক হবে না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আল্লাহতালা অনেক ধরনের ইসলামিক নাম এগুলো লেখা থাকে এজন্য আপনি যদি ইস্তিঞ্জা করার জন্য ব্যবহার করেন তাহলে এটা ইসলামিক ভাবে নিষেধ রয়েছে। আপনি যদি ভুলক্রমে না জানার আগে কাজে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আল্লাহতালার কাছে তওবা করে নিজের ঈমান মজুদ করতে হবে।

কয়লা ব্যবহার নিষেধ
কোন ধরনের বস্তু বা কাঠ আগুনে পোড়ানোর পরে যে কয়লা তৈরি করা হয় অথবা তৈরি হয় এগুলো দিয়ে কোনোভাবেই ইস্তেঞ্জা করবেন না। কারণ অনেক সময় কয়লার মাঝখানে আগুন থাকে আপনি যদি অজান্তে কলা নিয়ে ইস্তিঞ্জার ব্যবহার করেন তাহলে আপনি ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারেন। এ কারণে আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে ইস্তিঞ্জার করবেন না।

হাড্ডি ব্যবহার নিষেধ
কোন পশু বা পাখির অথবা অনেক সময় গরু ছাগল কুরবানী যে হাড্ডি রয়েছে এগুলো দিয়ে ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করবেন না কারণ এগুলো ইসলামিক দিক দিয়ে একদম নিষেধ করা রয়েছে অর্থাৎ জায়েজ নেই।

কোন গাছের পাতা ব্যবহার করা যাবে না
গাছের পাতার দ্বারা করা যাবে না কোন ধরনের জীবিত গাছ থেকে গাছের পাতা ছিড়ে এস্তান যা করা একেবারে নিষেধ। কারণ জীবিত গাছ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরুদ পাঠ করে এবং আল্লাহ তায়ালার জিকির করে। এগুলো ছাড়াও যেগুলো জীবিত প্রত্যেকটি গাছ রয়েছে এগুলো গাছ এর মধ্যে তেজস্ক্রিয় আছে।

আরো পড়ুনঃ নামাজ না হওয়ার কারণ - নামাজ কবুল হওয়ার লক্ষণ

আপনি যদি জীবিত গাছের পাতা ব্যবহার করেন তাহলে আপনার প্রসবের জ্বালাপোড়া থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারেন। আপনি যখন ইস্তিঞ্জা করবেন তখন কোন দিকে তাকানো যাবেনা কারণ কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ বিশ্লেষণ করবো।

কোন ধরনের কাঁচ ব্যবহার করা যাবে না
কাচ কেমন পদার্থ যা কোন ধরনের পানি শোষণ করতে পারে না। এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত পরিমাণ ধারালো হয়ে থাকে। এটা ব্যবহার করে যদি আপনি ঢিলা কুলুপ করেন তাহলে খুবই বিপদজনক। আপনার পায়খানার দ্বার ও মলমূত্রের জায়গা কত সৃষ্টি হতে পারে এজন্য কাজ ব্যবহার করা যাবে না।

পায়খানার পর ঢিলা ব্যবহার করার নিয়ম

সর্বপ্রথম আপনাকে ঢিলা একটি হাতে নিতে হবে নেওয়ার পরে পেছনের দিক থেকে শুরু করে সামনের দিক নিতে হবে। তারপরে আবার দ্বিতীয় ঢিলাটি হাতে নিয়ে পুনরায় সামনের দিক থেকে আবার পিছনের দিকে এবং তৃতীয় ঢিলাটির সামনের দিক দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি অধিক পবিত্র আর অনুকূল হতে পারে।

যদি আপনার অন্ডকোষগুলো ঝুলানো হয় তাহলে আপনার সামনের দিক করার প্রয়োজন হবে। মেয়েদের জন্য সব সময় সামনের দিক থেকে শুরু করতে হবে। এভাবে আপনি পায়খানার পর ঢিলা ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রসাবের পর পবিত্র অর্জন করা নিয়ম

ইসলামিক শরীয়তে আপনি দাঁড়িয়ে থেকে প্রসাব করতে পারবেন না। বসে থেকে প্রসাব করা সুন্নত। দাঁড়িয়ে থেকে প্রসাব করলে আপনি ঠিকমতো পবিত্রতা অর্জন নাও করতে পারেন। অনেক সময় পোশাকে পোশাক লেগে যেতে পারে তার জন্য ইসলামিক ভাবে বসে থেকে প্রসাব করা সুন্নত। আপনি যদি প্রসব করার পরে ধুয়ে ফেলেন এবং পানি ব্যবহার করেন এটা উত্তম। আপনি যদি মনে সন্দেহ থাকে যে আপনি পবিত্র কিনা সে ক্ষেত্রে আপনি পোশাকটি ধুয়ে ফেলবেন।

পবিত্রতা অর্জন করার জন্য আপনার মনের সন্দেহ দূর করতে আপনার পোশাকে সম্পূর্ণরূপে ধরে ফেললেই হবে। আপনি যখন প্রসাব করবেন যদি আপনার প্রসাবে ইস্তেঞ্জা করার পরে আপনার ফোঁটা ফোঁটা আবার বের হতে থাকে তাহলে আপনাকে আগে নিশ্চিত করতে হবে যে ফোঁটা বাহির না হয়। এরপর আপনি কুলুপ ব্যবহার করে নিজের পবিত্রতা অর্জন করে নিন।

প্রসাবে পর শুধু পানি ব্যবহার

আপনি যদি প্রসাবের পর পানি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার আবার পরবর্তীতে প্রসাবের ফোটা বের হতে পারে বা সম্ভাবনা থাকে। প্রসাব করার পরে সম্পূর্ণভাবে আপনার প্রসাব ভেতর থেকে বের করে নিতে হবে এরপরে আপনার সর্বপ্রথম ঢিলা বা কুলুপ করা উত্তম। প্রসাবের পরে শুধু পানি ব্যবহার করলে আপনার পবিত্রতা নাও আসতে পারে এর জন্য আপনার ঢিলা ব্যবহার করা উত্তম। আপনি শুধু পানি ব্যবহার করলে আপনার কাপড় ভিজে যেতে পারে এতে খারাপ দেখা যাবে। তাই প্রসাব করার পরে শুধু পানি ব্যবহার করা ঠিক নয়। কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ নিম্নে আলোচনা করব।

ইস্তিঞ্জা করা সুন্নত নাকি নফল

আপনি যদি ইস্তিঞ্জা করেন তাহলে এটা ইসলামিক শরীয়তে সুন্নত। চলুন আমরা জেনে নেই সুন্নতগুলো কি কি এবং কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ।
  • আপনি এমন জায়গায় ইস্তিঞ্জা করবেন যেন ওই জায়গায় কোন কিছু অর্থাৎ মানুষের নজর না পড়ে।
  • ইস্তিঞ্জা করার জন্য আপনার নরম জায়গা খুঁজে নিতে হবে, যেন শরীরে না পড়ে।
  • জুতা সেন্ডেল ব্যবহার করে আপনার ইস্তিঞ্জা করতে হবে।
  • ইস্তিঞ্জা করার সময় মাথা ঢেকে নিতে হবে।
  • চলাচল করার রাস্তা বা গোসলখানায় অথবা গাছের নিচে ইস্তিঞ্জা করা যাবে না।
  • সবসময় বাম পা দিয়ে পায়খানায় ব্যবহার করবেন।
  • নিকটবর্তী হয়ে সতর খুলতে হবে।
  • বসার সময় বাম পায়ে ভর দিতে হবে।
  • প্রসাব যেন শরীরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • বাম হাত দিয়ে কুলুপ ব্যবহার করতে হবে।

ঢিলা কুলুপ ব্যবহারের নিয়ম

আপনি যদি ঢিলা গুলো ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে বেজোড়ভাবে ঢিলা গুলো ব্যবহার করতে হবে। সর্বনিম্ন তিনটি ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করে আপনি পবিত্র হতে পারবেন। সব সময় চেষ্টা করবেন বিজোড় সংখ্যক ঢেলাকুলুপ ব্যবহার করার।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করার সময় ঢিলা কুলুপ তিনটি থাকতে হবে। বুখারী ১৬১

সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সবাইকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন তিনটার কম ঢিলা কুলুপ ব্যবহার না করি। আবু দাউদ ৭।

আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস

রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তিনটি ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করবে এবং তা দিয়েই ইস্তিঞ্জা করবে কারণ ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করার জন্য এ তিনটি যথেষ্ট। আবু দাউদ ৪০।

শেষ কথাঃ কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ

আমরা উপরোক্ত এই পোস্টে আলোচনা করেছি যে কয় দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জার নিষেধ এবং ঢিলা কুলুপ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। আশা করি আপনার এ পোস্টটি অনেক উপকারে আসবে কারণ ইসলামিক শরীয়তে পবিত্র হওয়াটা উত্তম আপনি যদি পবিত্র না হন তাহলে আপনার নামাজও কবুল হবে না। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url