কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় - হজের গুরুত্ব ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের জন্য হজ ফরজ করেনি। বরং আল্লাহ তায়ালা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী হজ্ব ফরজ করে দিয়েছেন। আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় এবং হজের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনাদের সকলেরই কত টাকা থাকলে হজ খরচ ফরজ হয় তা জেনে রাখা উচিত।
প্রিয় পাঠক চলুন আর দেরি না করে আমরা সকলে জেনে নিই কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় এব হজের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে। যা আপনাদের জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

সূচিপত্র

কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়

মহান আল্লাহ তা'আলা সকলকেই হজ পালন করতে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা হজ সকলের উপর ফরজ করেননি। মুসলমানদের হজ ফরজ হওয়ার বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে। কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় এই প্রশ্নটি হজ্বের শর্তাবলির মধ্যে একটি। পবিত্র হজ পালনের জন্য একটি মানুষের শরীর সম্পূর্ণরূপে সুস্থ থাকা লাগবে এবং হজে যাওয়ার জন্য যেকোনো একটি মাধ্যম থাকা লাগবে। যদি তার হজে যাওয়ার মত প্রাপ্ত পরিমাণ সম্পদ থাকে এবং পুরো ফ্যামিলিকে একাই চালানোর জন্য নিজে খরচ করতে পারবে এই পরিমাণ সম্পদ থাকলে হজ্ব ফরজ হয়।

আরো পড়ুনঃ মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম - মেয়েদের ইহরামের নিয়ম

অতএব একজন ব্যক্তির কাছে তার পরিবারের সকল চাহিদা মেটানোর পরে যদি তার কাছে হজে যাওয়ার মত প্রাপ্ত পরিমাণ টাকা পয়সা থাকে বা ধন সম্পদ থাকে তাহলে তার ওপর হজ ফরজ হবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন: ‘যার উপর হজ ফরজ হয়েছে সে তাড়াতাড়ি হজ করে নাও, দেরি করো না’। সুতরাং আপনাদের যাদের হজে যাওয়ার মত সামর্থ্য হয়েছে তারা তাড়াতাড়ি হজ পালন করে নিন। পরিশেষে বলা যায় আপনারা অবশ্যই আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে কত টাকা হলে হজ ফরজ হয় সেই সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে পেরেছেন।

হজ ফরজ হওয়ার গুরুত্ব এবং ফজিলত

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা কত টাকা হলে হজ ফরজ হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি। এবার আপনাদের হজ ফরজ হওয়ার গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। নিম্নে তা দেওয়া হলঃ

  • আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,“যে ব্যক্তি হজ অথবা ওমরা কিংবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে অতঃপর সে ওই পথেই মৃত্যুবরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তার জন্য গাজ, হাজী অথবা ওমরা পালনকারীর সওয়াব লিখে দেবেন”। (মিশকাত শরীফ: ২৪২৪)
  • হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করলো এবং স্ত্রী সহবাস, যাবতীয় অশ্লীল কাজ ও গালমন্দ থেকে বিরত থাকলো, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফেলল, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল’।(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
  • আব্দুল্লাহ ইবনু মাসুদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা পরপর একত্রে আদায় কর। কেননা এ হজ ও ওমরা দারিদ্র ও গুনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা রুপার ময়লা যেমন ভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়ে যায়। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়’।
  • হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেছেন, আমি হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করল এবং স্ত্রী সহবাস, যাবতীয় অশ্লীল কাজ ও ডালমন্দ থেকে বিরত থাকলো, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফেলল, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিলেন’। (বুখারী, মুসলিম, মিশকতা)
  • হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,‘যে ব্যক্তি হজ অথবা ওমরা কিংবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, অতঃপর সে ওই পথে মৃত্যুবরণ করেছেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর জন্য হাজী অথবা ওমরা পালনকারীর সোয়াব লিখে দিবেন’।(মিশকাত শরীফ: ২৪২৪)
  • আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,‘হজ যাত্রীরা ও ওমরার যাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তার কাছে দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তার কাছে মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন’।(ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)

পরিশেষে বলা যায় হজ ফরজ হওয়ার গুরুত্ব এবং ফজিলত এর গুরুত্ব অপরিসীম। আপনাদের যাদের সামর্থ্য হয়েছে তারা বসে না থেকে খুব তাড়াতাড়ি হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। আল্লাহ তায়ালা সুযোগ মাত্র একবারই করে দেয়। সুতরাং সুযোগের অসৎ ব্যবহার না করে সৎ ব্যবহার করে চলুন।

হজ ফরজ হওয়ার জন্য তিনটি কাজ

আমরা উপরোক্ত আর্টিকেলগুলোর মাধ্যমে কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় এবং হজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হজ ফরজ হওয়ার জন্য তিনটি কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম্নে তা দেওয়া হলঃ

  • নিয়ত সহীহ করা।
  • নির্দিষ্ট সময়ে তথা হজের মাসেেই হজ্জ সম্পাদন অর্থাৎ হজ পালন করা।
  • হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দেখানো পথে ভারত সম্পাদন অর্থাৎ হজ পালন করা।

যে ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে হজ অথবা ওমরা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে এবং সে সেই পথে মৃত্যুবরণ করেছে যদি তার সঙ্গীরা অর্থাৎ প্রতিনিধি দল এর সকল মানুষ তার জন্য দোয়া করে তাহলে তার হজ কবুল করে দেবেন আল্লাহ তাআলা।

হজ ফরজ এর শর্তাবলী

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা হজের গুরুত্ব এবং কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি সকলেই তা বুঝতে পেরেছেন কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় এবং হজের ফজিলত সম্পর্কে। কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় শুধুমাত্র এই বিষয়ে জানলেই হবে না তার সাথে হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলীও আপনাদের জেনে রাখতে হবে। নিম্নে হজ খরচ হওয়ার শর্তাবলী দেওয়া হলঃ

  • নিজেকে স্বাধীন হওয়া লাগবে।
  • নিজেকে মুসলমান হওয়া লাগবে।
  • জ্ঞান এবং পূর্ণবয়স্ক হওয়া লাগবে।
  • শারীক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা লাগবে।
  • পরিবারের সকলের খরচ ব্যতীত নিজে যেন হজের সকল খরচ বহন করতে পারেন সেই পরিমাণ সামর্থন থাকা লাগবে।

উপরোক্ত শর্তগুলো অবশ্যই আপনাকে হজ পালনের জন্য পালন করতে হবে। এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দেখানো পথে চলতে হবে। হজ্জ পালনের জন্য অন্য কারো সাহায্য নেওয়া যাবে না নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী হজ পালন করতে হবে। কেননা যে ব্যক্তির পূর্ণবয়স্ক এবং জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে এবং তার হজে যাওয়ার সামর্থ্য হয়েছে তার প্রতি অবশ্যই হজ ফরজ।

ঋণ করে হজে যাওয়া যাবে কি

আমাদের মাঝে অনেকে আছে যাদের মাঝে হজ সম্পর্কে ধারণা এখনো অস্পষ্ট। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বান্দাদের মধ্যে সকলের উপর হজ্ব ফরজ করে দেয়নি। আল্লাহ তায়ালা সেইসব বান্দাদের উপর হজ ফরজ করেছে যাদের কাবা শরীফে যাওয়া-আসার সামর্থ্য আছে। এবং সকল ধরনের খরচের একাই বহন করতে পারবে। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, “মানুষের মধ্যে যারা সেখানে অর্থাৎ কাবা শরীফে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ”।(সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭)

আরো পড়ুনঃ কোরবানির ঈদ ২০২৩ - কোরবানির করনীয়

তবে ঋণ করে পথ পালন করা যাবে যদি ঋণ কারী ব্যক্তি যার থেকে ঋণ নিবে তার ঋণ সহজে এবং হালালভাবে শোধ করতে পারে। তবে আমার মতে এবং বিভিন্ন ধরনের আলেমগণের মতে ঋণ করে ভাঁজ পালন না করাই ভালো কেননা ঋণ করে হজ পালন করার সময় আপনি যদি মারা যান তাহলে সেই দিন শোধ নাও হতে পারে। এতে আপনি তার কাছে ঋণী হয়ে থাকবেন। আর ঋণের বোঝা নিয়ে মৃত্যু হলে হাশরের মাঠে নিজ নেকি থেকে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে(বুখারী, মেশকাত: ৫১২৬)

অতএব পরিশেষে বলা যায় হজ পালনের জন্য নিজেকে আগে সামর্থ্যবান হতে হবে অর্থাৎ যতক্ষণ না আপনি সামর্থ্যবান হতে পারছেন এবং হজের সব খরচ নিজে বহন না করতে পারছেন ততক্ষণ আপনি হজ পালন করতে পারবেন না বা আপনার উপর হজ ফরজ হবে না। সুতরাং যতক্ষণ না নিজে সামর্থ্যবান হচ্ছেন তখন পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক উপলক্ষে আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদের কত টাকা থাকলে হজ খরচ হয় এবং হজের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা সকলে তা বুঝতে পেরেছেন। আপনাদের যাদের সামর্থ্য হয়েছে এবং হজ ফরজ হয়েছে তাদের অবশ্যই হজ পালন করে নেওয়া উচিত। এতে আল্লাহ তা'আলা অনেক খুশি হয়। আমাদের এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url