সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ - সফর মাসের বর্জনীয় কাজ

আসসালামু আলাইকুম, আপনারা হয়তো সকলেই জানেন ইতিমধ্যে আমাদের আরবি মহরম মাস শুরু হয়েছে এবং মহররম মাসের তাৎপর্য এবং ফজিলত সম্পর্কে সকলেই জানেন। আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ এবং সফর মাসের বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কেননা সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো অনেকেই সফল মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তাই চলুন আর দেরি না করে আমরা নিম্নে জেনে নেই সফর মাসের ফজিলত এবং আমল সম্পর্কে বিস্তারিত।

সূচিপত্রঃ সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩

ভূমিকা

সফর শব্দটি আরবি শব্দ ‘সিফর’ মূল ধাতু থেকে এসেছে। এই পবিত্র সফর মাস হল আরবি মাসের দ্বিতীয় তম মাস। সফর বাংলা শব্দের অর্থ হল খালি করা বা শূন্য করা। সেই সময়ে আরব দেশের মানুষরা গোত্রে গোত্রে লড়াই করত। যখন পবিত্র আরবী মহরম মাস আসতো তখন এই সমস্ত লড়াই বন্ধ করে রাখত এবং যখন আরবি দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ সফর মাস আসত তখন সকলেই ঘর থেকে বেরিয়ে আবার একে অপরের সাথে লড়াই শুরু হয়ে যেত।

আরো পড়ুনঃ ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ১৪৪৫ হিজরি কত - ১৪৪৫ হিজরী ক্যালেন্ডার

এই লড়াইয়ের পুরুষরা দলে দলে যোগদান করত। এর ফলে সেখানকার সমস্ত ঘর খালি হয়ে যেত। আরবিতে ‘সফরুল মাকান’ অর্থাৎ মানুষ শুন্য এমন জায়গা কে বোঝানো হয়েছে। এর জন্য আরবি মাসের দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ সফর মাস তখন থেকে নামকরণ করা হয়েছে। আবার অন্য ভাষায় অর্থাৎ অন্যভাবে এই সফর মাসকে তামাটে, হলদাটে, ফ্যাকাসে, বিবর্ণ ইত্যাদি অর্থ বলা হয়। 

এর কারণ তখনকার সময়ে আরব দেশে খাদ্য অভাব, খরা, অকাল ও মঙ্গাভাব দেখা দিত অর্থাৎ এই মাসকে বলা হতো বিবর্ণ সফর মাস। আরব দেশের মানুষরা সেই সময় চাঁদ দেখা থেকে বিরত থাকতো এবং অপেক্ষা করত কবে সফর মাস শেষ হয়ে যাবে। এর জন্য সফল মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করব। ফজিলত এবং আমল সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩

প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনাদের হয়তো অনেকেরই সফর মাসের ফজিলত আমল সম্পর্কে অজানা থেকে গেছে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই কেননা নিম্নে সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলঃ

ফজিলত
আমাদের সকলেরই উচিত সফর মাসের ফজিলত সম্পর্কে জেনে রাখা। কেননা মহান আল্লাহতালার কাছে আরবি প্রতিটা মাসই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলত পূর্ণ। এর জন্য সফর মাসও আরবি মাসগুলোর মধ্যে বাইরে নয়। আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্ম আসার আগে আরব দেশে এই সফর মাস কে অকল্যাণকর মাস বলে চিহ্নিত করেছিল। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস শেষ হওয়ার সংবাদ দিবে আমি তাকে জান্নাতে সুসংবাদ দেবো’। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর এই হাদীসটি নিয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে দুইটি মত রয়েছে। প্রথম মতটি হলো- এটা জাল হাদিস। এই হাদীসটি যে বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে কেউ হাদিস সংরক্ষণকারী নয়। দ্বিতীয় মতটি হলো- হাদীসটি সহিহ এবং এ হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

সেই ঘটনাটি হল- হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রিয় সাহাবী আবু বক্কর সিদ্দিক রাঃ ইসলামের দাওয়াত নিয়ে অনেক দূরের একটি জনপদে অর্থাৎ যেখানে মানুষ থাকে সেখানে সফর করেছিল। সেইখান থেকে ফিরতে তার অনেক দেরি হচ্ছিল। এর জন্য হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার প্রিয় সাহাবীর জন্য অনেক চিন্তায় পড়ে যান। ঠিক এমন অবস্থায় একটি চিঠি এলো। আবু বক্কর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু চিঠিতে লিখেছেন সফরমার শেষ হলে তিনি মদিনায় ফিরে আসবেন। সেই সময় সফর মাসের আরো কিছুদিন বাকি ছিল। এর জন্য বলা যায় কল্যাণ এবং অকল্যাণ সকল কিছু আমাদের নির্ভর করে কর্ম ও বিশ্বাসের ওপর। সুতরাং সেই বিষয়টি চিন্তা করে পবিত্র এই আরবি সফর মাসে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত আমল গুলো বেশি বেশি আমাদের করা উচিত।

আমল
আপনারা অনেকেই সফর মাসের আমল সম্পর্কে জানেন না। আবার অনেকে আছেন যারা সফর মাসের বিশেষ কোনো আমল আছে কিনা সেই সম্পর্কে গুগলে খোঁজাখুঁজি করেন। আমরাই আর্টিকেলের মাধ্যমে সফল মাসের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। নিম্নে তা বিস্তারিত দেয়া হলোঃ

আরো পড়ুনঃ আশুরায় ঘটে যাওয়া ঘটনা - আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা

  • আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাঃ হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন “প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান”। ( বুখারী-১১৫৯,১৯৭৫ )
  • সফর মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে আইয়ামে বীজের তিনটি রোজা রাখতে হবে।
  • আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। কারণ প্রতি সোমবার এবং বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে বান্দার আমলনামা উপস্থাপন করা হয়। আর আমি চাই আমার আমল পেশ করার সময় যেন আমি রোজা অবস্থায় থাকি ( সুনানে নাসায়ী- ২৩৫৮ )
  • এছাড়াও সব সময় ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নত আমল গুলো যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।

সুতরাং পরিশেষে বলা যায় আপনারা হয়তো এতক্ষণে সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে গেছেন আর বুঝতেও পেরেছেন সফর মাসে কি করতে হবে। মহান আল্লাহতালার কাছে সকল একই রকম গুরুত্ব রয়েছে। তাই আপনারাও সকল মাসই আমল করতে থাকুন।

সফর মাসের করণীয় কিছু কাজ

প্রিয় পাঠক আপনাদের মধ্যে অনেক জনই আছে যারা সফর মাসের করণীয় কিছু কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। আপনারা সকলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লে সফর মাসের করণীয় কিছু কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আরবি সকল মাস এবং সকল দিনই বরকতময় এবং গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের মাঝে অনেক জন আছে জাহিলি যুগের মত এ যুগেও সফর মাসকে অকল্যাণ মাস হিসেবে গণ্য করে। আবার অনেকে মনে করে এই মাসে বিবাহ থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে এই ধারণা গুলো সম্পূর্ণ ভুল।

আমাদের সকলের উচিত পবিত্র এই সফর মাসকে অকল্যাণকর মাস না ভেবে বরকতময় এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস ভাবা। এর জন্য আমাদের প্রতিদিনই উপরে দেখানো আমল গুলো করতে হবে এবং নবী রাসুলের দেখানো পথে চলতে হবে। সব সময় সৎকর্ম করতে হবে এবং অসৎকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা কল্যাণ অকল্যাণ এই দুইটি নির্ভর করে একজন ব্যক্তির সব সৎ-অসৎ কর্মের ওপর। তাই আপনারাও সফর মাসে বেশি বেশি আমল করুন।

সফর মাসে বর্জনীয় কিছু কাজ

প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সফর মাসের বর্জনীয় কিছু কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কেননা সফর মাসে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হয়। নিম্নে সফর মাসের বর্জনীয় কিছু কাজ দেওয়া হলোঃ

আরো পড়ুনঃ কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় - হজের গুরুত্ব ফজিলত

  • চোখ লাফালে বিপদ আসবে মনে করা।
  • হাতে তালু চুলকালে টাকা পয়সা আসবে মনে করা।
  • অনেক সময় কান্নাকাটি করলে রোগবালায় আসবে মনে করা।
  • কোন ধরনের বিশেষ ধরনের পাখি ডাকলে বা হাত থেকে কোন কিছু করে গেলে মেহমান আসবে মনে করা।
  • জিহ্বায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিচ্ছে সেগুলো মনে করা।
  • দোকান খোলার শুরুতেই কাউকে বাকি দিলে সারাদিন কেনাবেচা হবে না এগুলো মনে করা।
  • কারো কথা মনে করলে এবং সাথে সাথে সে উপস্থিত হলে দীর্ঘজীবী হবে মনে করা।
  • আসরের পর ঘর ঝাড়ু দেওয়া এটাকে খারাপ মনে করা ইত্যাদি।

সুতরাং প্রিয় পাঠক পবিত্র সফর মাসে উপরোক্ত কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে শুধু সফর মাসেই নয় প্রতিটা মাসই এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং নিজেকে সঠিক আমলে কাজে লাগাতে হবে।

শেষ কথাঃ সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে সফল মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনাদের অজানা সফর মাসের তথ্যগুলো উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে পেয়ে গেছেন। উপরোক্ত আমলগুলো এবং ফজিলত গুলো আপনি করুন এবং অন্য কেউ জানান। আমাদের এই পোস্টটি পাওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url