যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা থেকে বাঁচার উপায়

বর্তমানে বাংলাদেশে রোগের সংখ্যা বেড়ে চলেছে যার মধ্যে যক্ষা হল একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে, আমাদের বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বিশ্বজুড়ে এখন এই যক্ষা রোগে প্রায় সকল ধরনের মানসী আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ যক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে তেমনটা জানে না।
তাই আজ আমরা যক্ষা রোগের লক্ষণ ও যক্ষা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। যক্ষা রোগের লক্ষণ  এবং যক্ষা থেকে বাঁচার উপায় দেওয়া হলো।

সূচিপত্রঃ

যক্ষা রোগের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

আমাদের দেশে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছে যারা সহজে যক্ষা রোগ হলে বুঝতে পারে না এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো ও ধরতে পারেনা। তাদের জন্য যক্ষা রোগের লক্ষণ বোঝার সহজ নিয়ম হচ্ছে সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় শরীরে জ্বর আসে। খাবারের উপর রুচি থাকলেও সেই খাওয়ার খেলে শরীরে কোন প্রভাব পড়বে না বরংচ দিন দিন শুকিয়ে যাবে। যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে কাশির সাথে কফ হবে। সেই কফ আর ঠিক হবে না। এর জন্য আপনারা যদি কোন ডাক্তারের কাছে থেকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ খান তবুও শরীর ঠিক হবে না।

আরো পড়ুনঃ টিউমার ভালো করার উপায় - টিউমার কিভাবে প্রতিরোধ করবেন

যক্ষা রোগের লক্ষণ এর ক্ষেত্রে কফের সাথে প্রথম অবস্থায় অল্প অল্প রক্ত বের হবে। যক্ষা রোগ হওয়ার কারণে রোগীর খাওয়া-দাওয়া আস্তে আস্তে কমে যাবে। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাবে। সাধারণত এই ধরনের রক্ষা ফুসফুসে হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্য কোন যক্ষা হলে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিবে না এর জন্য আপনাকে ডক্টরের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

যক্ষা থেকে বাঁচার উপায়

জন্মগ্রহণের পর প্রত্যেক নবজাত বাচ্চাদের বিসিজি টিকা দিতে হবে। যক্ষা আক্রান্ত রোগীদের সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বাসার ভেতরে খোলামেলা পরিবেশ এবং আলো বাতাস যেন বাসার ভেতরে ঢুকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।যদি ডায়াবেটিস শরীরে থেকে থাকে তাহলে যথাযথ সময়ে পার্শ্ববর্তী কোন মেডিকেল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

কারণ ডায়াবেটিকস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখায় দিলে সব সময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন যাতে কোন রোগ জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ না করতে পারে। যক্ষা যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীকে সবসময় নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে। যক্ষা আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলে মাক্স পড়তে হবে বা কথা বলার সময় দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে হবে।

আমাদের দেশে অনেক নিম্নমানের মানুষজন আছে যারা যক্ষা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে তেমনটা জানেনা। তাই আপনারা যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন এবং নিজের যত্ন নেন তাহলে যক্ষা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা রয়ে যাবে।

ফুসফুসে ছাড়াও যক্ষা অনেক জায়গায় হয়

আমাদের দেশের মানুষ অধিকাংশ ফুসফুসে যক্ষা রোগে আক্রান্ত। তবে ফুসফুসে ছাড়াও ফুসফুসের আবরণী, লসিকা গ্রন্থি, মস্তিষ্কের আবরণী, আন্ত্র, হাড়, ত্বক ইত্যাদি জায়গায় যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে নখ, চুল এবং হৃদপিন্ডে কোন প্রকার জীবাণু প্রবেশ করলে যক্ষা হয় না। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে যক্ষার জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা যদি দৈনন্দিন সুষম খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার না খায়।

আরো পড়ুনঃ আয়ুর্বেদিক কি? আয়ুর্বেদিক ঔষধের উপকারিতা

এক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যক্ষা রোগের জীবাণু দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে যায় এর ফলে যক্ষা রোগের লক্ষণ খুব তাড়াতাড়ি দেখা দেয়।

যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক

দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি, মুখে অরুচি, হাসির সঙ্গে রক্ত পড়া, ওজন কমে যাওয়া, ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই নিকটস্থ কোন মেডিকেলে গিয়ে যক্ষা পরীক্ষা করতে হবে। যদি অনেকদিন ধরে যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দেয় এর ফলে শরীরে লসিকা গ্রন্থির স্ফীতি, মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, আবার কখনো কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়া, পেটে বা বুকে পানি জমা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে সতর্ক হয়ে যেতে হবে।

যক্ষা থেকে বাঁচার উপায় এবং চিকিৎসা

আমাদের শরীরে যক্ষা রোগ হলে সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত দুই মাস চার ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং পরবর্তী তিন থেকে চার মাস দুই ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই দুই ধরনের চিকিৎসা নিলে শরীরে যক্ষা আশি থেকে নব্বই ভাগ কমে যায়। এ অবস্থায় যদি রোগী মনে করে আমি সুস্থ হয়ে গেছি এবং যদি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে আরো মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে। এ অবস্থায় আবার পাঁচটা ওষুধ দিয়ে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করতে হয়।

আরো পড়ুনঃ জ্বর নিয়ন্ত্রণ ঘরোয়া উপায়

যক্ষা রোগের চিকিৎসায় প্রথমত যে দুই মাস যে চারটি ওষুধ দেওয়া হয় তা নিয়মিত খেতে হবে। এই চারটি ঔষধ একদিনও বাদ দেওয়া যাবে না। সাধারণত এই চারটি ওষুধ রোগের ওজনের ওপর নির্ভর করে ডাক্তারেরা নির্ধারণ করে দেয়। এর জন্য আপনাদের যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এটি মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা

যক্ষা রোগ হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কিছু নেই। আমাদের দেশে এখন যক্ষা রোগের লক্ষণ এর যক্ষা থেকে বাঁচার উপায় এর সুচিকিৎসা রয়েছে। তবে মেডিকেল থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে এখন যক্ষা রোগ হলে দুই ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়, ৬ মাস ও ৮ মাস মেয়াদী। আপনারা যদি যক্ষা রোগের ওষুধ অনিয়ম করে সেবন করেন তাহলে যক্ষা রোগ কোনমতেই ভালো হবে না এর জন্য আপনাকে নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো ওষুধ গ্রহণ করতে হবে তাহলে আপনি যক্ষা থেকে বাঁচতে পারবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url