কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম - কোরবানির পশুর কি খাওয়া হারাম
সূচিপত্র
কোরবানি কাকে বলে
মুসলমানদের বছরে দুইটি উৎসব রয়েছে তার মধ্যে বড় উৎসব হলো ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আঃ এর সময় থেকে শুরু করে কোরবানির মূল শিক্ষা হলো- সকল ধরনের ঠুনকো ও খোঁড়া যুক্তি ও বুদ্ধির ঊর্ধ্বে গিয়ে আল্লাহর হুকুম আহকামের উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা।
আরো পড়ুনঃ ভাগে কুরবানীর হাদিস - ৭ ভাগে কুরবানীর দলিল
আল্লাহর উপর পূর্ণ আনুগত্যর নমুনা হিসেবে হযরত ইব্রাহিম আঃ নিজের অতি প্রিয় পুত্র ইসমাইল আঃ কে আল্লাহর নিয়তে উৎসর্গ করেছিলেন। আল্লাহর হুকুমের উপর অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কোরবানিকে কবুল করে নেন এবং বিশ্ব মুসলিমদের জন্য আল্লাহর হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের এক আলোক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
কোরবানির সঠিক অর্থ
কোরবানি, কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা কে ইসলামিক আইন হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা ঈদুল আযহার সময় পশু কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম এবং কোরবানির পশু কি খাওয়া হারাম এর সম্পর্কে আলোচনা করে। কুরবানী শব্দটি হিব্রু কোরবান আর সিরিয়াক ভাষার কুরবানা শব্দ দুটির সঙ্গে সম্পর্কিত যার আরবি অর্থ হলো “কারো নিকটবর্তী হওয়া”।
কুরবানীর পশু যেমন যে কোন মুসলিম নারী ও পুরুষ জবাই করতে পারেন, তেমনি কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম ও রয়েছে। যার কোরবানি তার নিজে জবাই করা উত্তম এক্ষেত্রে কোরবানির পশু কি খাওয়া হারাম তা জায়েজ নয় কুরবানীর পশু জবাইয়ের দোয়া জেনে রাখা ভালো। তবে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করলেই হয়।
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-আমি প্রত্যেক বান্দার জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।(সূরা- হজ্জ, আয়াত- ৩৪)
এছাড়া কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে দোয়া জানা থাকলে পড়া ভালো। জবাই এর কোন নিয়ত নেই এবং কুরবানী দাতার নামও বলা জরুরী নয় এক্ষেত্রে কোরবানির পশু কি খাওয়া হারাম তার কোন যুক্তি নেই।
যে ব্যক্তি কোরবানি দিবেন, তার নিজ মনের ইচ্ছা শক্তি নিয়ত হিসেবে কবুল হবে । নিজে জবাই করতে না পারলেও অন্য কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন। অন্য কেউ জবাই করে দিলে কোরবানির পশু কি খাওয়া হারাম হবে তা যথেষ্ট সত্য নয়। তবে কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় ব্যাক্তি নিজে উপস্থিত থাকলে ভালো হয়।
কয়জন অংশীদারি একটি কোরবানিতে শরিক হতে পারে
সমাজের কিছু মানুষ ধারণা করে যে, কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম হলো একটি পশুতে সাতজন শরিক হতে পারে আর এতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি সাতজনের কম হলে বেজোড় হতে হবে। যেমন যেমন একটি গরুতে ১,৩,৫ অথবা ৭ জন শরিক হতে পারবে। কিন্তু ২,৪,৬ জন কোরবানির ভাগে শরিক হতে পারবেনা। অনেকে আবার বলেন যে তাহলে কোরবানির পশু কি খাওয়া হারাম? না! এই ধারণা ইসলাম কখনোই সমর্থন করেনা।
আরো পড়ুনঃ নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ জেনে নিন
আর এই ধারণাটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। ইসলামিক নিয়ম কানুন অনুযায়ী একটি গরু অথবা দুম্বা যেমন একজন ব্যক্তি একা কোরবানি দিতে পারে তেমনি ভাবে একের অধিক বা দুই থেকে সাতজন পর্যন্ত কোরবানিতে একত্রে শরিক হতে পারেন এতে কোন বাধা নিষেধ নেই। কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে শরিক হওয়া ব্যক্তি জোর না হয়ে বেজোড় হয় এতে আলাদা কোন ফজিলত নেই।
যার ফলে উপস্থিত পাঁচজনের স্থানে ৬ জন কিংবা ৬ জনের স্থানে সাতজন একত্রে শরিক হয়ে কুরবানী করতে পারে। সুতরাং বলা যায় কোরবানিতে যেকোনো সংখ্যক ব্যক্তি শরীফ হতে পারে। তাই কোরবানি ভাগে বিজোড় সংখ্যা কিংবা জোড় সংখ্যক ব্যক্তি শরিক হয়ে কোরবানি দেওয়াতে আলাদা কোন ফজিলত নেই।
পশু ভেদে কতজন ব্যক্তি শরিক হওয়া যায়
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কোরবানি দিতে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি শরীফ হতে পারবে অর্থাৎ এই সকল পশু কোরবানির ক্ষেত্রে একাই দিতে হবে। এ সকল পশু কোরবানিতে একের অধিক ব্যক্তি শরিক হয় না। উট, গরু, মহিষ এইগুলো সাত জন এবং সাতের কম যে কোন সংখ্যক ব্যক্তি যেমন ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ শরিকে কোরবানি করা জায়েজ।
অর্থাৎ এ সকল পশু কোরবানিতে এক থেকে সাত যেকোনো সংখ্যক ব্যক্তি শরিক হতে পারে। তবে পশু কোরবানিতে যেই কয়জন ব্যক্তিই শরিক হন না কেন তাদের অংশ সমানভাবে থাকতে হবে।
কোন অংশীদারের নিয়ত সঠিক না হলে
কোরবানির অংশীদার নির্ণয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামিক নিয়ম মানা প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা কোরবানিতে অংশীদারি ব্যক্তি যদি আল্লাহর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে, শুধু গোস্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি করে, তবে সেই কোরবানি সঠিক হবে না। অংশীদারে শরিক হওয়া ব্যক্তি যদি এমন চিন্তা করে তবে অংশীদারের কারো কোরবানি সঠিক হবে না। তাই কোরবানির অংশীদার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
বেশিরভাগ ব্যক্তি আছে যারা নিজের কোরবানি নিজে করতে চাই না এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনেকে ধারণা করেন যে কোরবানির সঠিক নিয়মকানুন এবং পদ্ধতি তিনি জানেন না। অথচ কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি একেবারেই সহজ। কোরবানির পশু জবাই করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
যে ব্যক্তি অনেক সময় মনে করেন তার কোরবানিটি শুদ্ধ হয়নি এক্ষেত্রে কোরবানির পশু কি খাওয়া হারাম এই হীনমন্যতায় তিনি ভুগতে থাকেন। তবে পশু জবাই বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য দুটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। এই বিষয় দুইটি হচ্ছে-
- কোরবানির পশু জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলে যবেহ শুরু করা। অর্থাৎ চুরি চালানোর শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলে জবাই করতে হবে। ইসলামে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা জায়েজ নেই। অন্য ব্যক্তির নামে পশু জবাই করলে সেই পশুর গোশত মুসলমানদের জন্য খাওয়া হারাম। তাই এই সকল বিষয়গুলো খেয়াল রাখা আবশ্যক।
- কোরবানির পশু জবাই করার সময় আরো যে সকল বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী, আর দুই পাশে থাকা খাদ্যনালী যেন কাটা হয়। এ নালীগুলো কাটা হলে তবেই পশু জবাই বিশুদ্ধ হবে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে যে কেউ নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবাই করতে পারবে। অর্থাৎ কোরবানির সময় আল্লাহর নামে নিয়ত বেঁধে তথা বিসমিল্লাহ বলে পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী ও দুই পাশের দুটি নালী জবাই করা হলে তবেই কোরবানি বিশুদ্ধ হবে। তাছাড়া কোরবানির পশু জবাই করার ক্ষেত্রে আরো যে সকল বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা হলঃ
- কোরবানি দেওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহ তায়ালার নাম নিয়ে পশু কোরবানি দিতে হবে। আল্লাহতালার নাম ছাড়া যেন অন্য কোন নাম মুখে না আসে সেই দিকে সম্পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে।
- পশু কোরবানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পশু জবেহ করার সময় খাদ্যনালী, শ্বাসনালীর, দুই পাশে থাকা দুই নালী কেটে দিতে হবে। দুইটি নালী কাটা হয়ে গেলে জবেহ করা সম্পন্ন হবে।
- কুরবানির পশু কোরবানি দেওয়ার সময় একটু পশুর সামনে যেন আরেকটি পশুর কোরবানি না দেয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- পশু কোরবানি দেওয়ার সময় পশুর সামনে ছুড়ি ধার দেওয়া যাবে না। তবে মনে রাখতে হবে পশু কোরবানি দেওয়ার আগে ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। কেননা হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন কোরবানি দেওয়ার আগে ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে।
- কোরবানি দেওয়ার সময় পশুকে বাম কাতে সোয়াতে হবে এবং পা গুলো পশ্চিম দিকে রাখতে হবে।
- অতঃপর কোরবানির দোয়া শুদ্ধভাবে এবং সঠিকভাবে পড়তে হবে। তবে মনে রাখতে হবে পশুকে শোয়ানোর পর কোরবানি দেওয়ার দোয়া পড়তে হবে।
- পশু কোরবানি দেওয়ার সময় যদি বড় দোয়াটি কেউ করতে না পারে তাহলে- “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মীনকা ওয়া লাকা” এই ছোট্ট দোয়াটি পড়েও কোরবানি দেওয়া যাবে।
- আপনারা যদি নিজের পশু নিজে কোরবানি দিতে চান তাহল- “আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল্লাহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবি কা মোহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইব্রাহি “। এই দোয়াটি পড়বেন।
- পরিশেষে অন্য কারো কোরবানি করলে- “আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল্লাহু মিনকা মিনকুম কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মোহাম্মদিও ওয়া খালিলিকা ইব্রাহিম”। এই দোয়াটি পড়তে হবে।
কোরবানির পশুর কি খাওয়া হারাম
প্রিয় পাঠক আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি কোরবানি ভাগে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এখন কোরবানির পশুর কি খাওয়া হারাম সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম্নে কোরবানির পশুর কি খাওয়া হারাম তা দেওয়া হলোঃ
আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত বিস্তারিত জানুন
- প্রবাহিত রক্ত
- মাংস গ্রন্থি
- অন্ডকোষ
- পিত্ত
- মাদী প্রাণীর স্ত্রীলিঙ্গ
- নর প্রাণীর পুং লিঙ্গ
- মূত্রথলি
পরিশেষে বলা যায় উপরোক্ত সাতটি অংশ কোরবানির পশুর খাওয়া ইসলামী মোতাবেক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আমাদের উচিত উপরোক্ত অংশগুলো খাওয়া থেকে দূরে থাকা। এবং সবাইকে কোরবানির পশুর হারাম অংশ খাওয়ার এর কথা জানিয়ে দেওয়া।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url