মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩
সূচিপত্র
আকিকা কাকে বলে?
আকিকা আরবি শব্দের অর্থ হলো ভাঙ্গা, কেটে ফেলা ইত্যাদ। ইসলামী পরিভাষায় সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে তার কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর নামে কোন হালাল গৃহপালিত পশু জবাই করাকে আকিকা বলে। আকিকা করা হলো সুন্নত এর মাধ্যমে আল্লাহ তালার রহমত পাওয়া যায় এবং সন্তানের বিভিন্ন ধরনের বিপদ আপদ দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ সফর মাসের ফজিলত আমল ২০২৩ - সফর মাসের বর্জনীয় কাজ
মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩
আমাদের ইসলামিক দৃষ্টিতে আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং বিধি বিধান রয়েছে। ইসলামিক দৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের বিধি-বিধান মেনে মেয়ে সন্তানের আকিকা দিতে হবে। ছেলে এবং মেয়ে সন্তানের মধ্যে আকিকা দেওয়ার ভিতরে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ছেলেদের আকিকা দিতে হলে দুটি পশু দিয়ে দিতে হয় এবং মেয়েদের আকিকা দিতে হলে একটি পশু দিয়ে দিতে হয়। মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩ এই পোস্টটিতে আপনারা মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সকল কিছু বিস্তারিত জানতে পারবেন। মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু জানার জন্য আমাদের এই পোস্টটি পুরোটি পড়ুন। নিম্নে তা বিস্তারিত দেওয়া হল।
মেয়েদের আকিকা করানোর সময়
মেয়েদের আকিকার নির্ধারণ করা হয় মূলত মেয়ে সন্তান জন্মানোর সপ্তম দিনে। যদি মেয়ে সন্তান আজ জন্ম নেয় তাহলে আজ থেকে শুরু করে ঠিক সাত দিন পরে মেয়েদের আকিকা সম্পন্ন করতে হয়। আকিকা করার সময় মেয়ে সন্তানের মাথায় মন্ডল করতে হয় এবং ইসলামিক নাম রাখতে হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আকিকা সম্পর্কে বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক স্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথামুণ্ডন করে নাম রাখবে’। ( সুনানে আবু দাউদ- ২/৩৯২ )
আবার যদি কোন কারণে বা কোন ধরনের সমস্যার জন্য সন্তান জন্ম দেওয়ার ৭ দিনের বেলায় আকিকা না দিতে পারেন তাহলে ১৪ তম দিনে আকিকা সম্পন্ন করতে হবে। আবার যদি কোন কারণবশত ১৪ তম দিনে আকিকা না করতে পারেন তাহলে ২১ তম দিনে আকিকা সম্পন্ন করতে হবে। যদি আপনি ২১ তম দিনেও আকিকার না করতে পারেন তাহলে যে কোন দিনে আপনি আকিকা করতে পারবেন। তবে একটি সন্তানের জন্য তার সাত দিনের বেলায় আকিকা দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
যদি পিতা-মাতা আকিকা না দেয় তাহলে নিজে নিজের আকিকার সম্পন্ন করতে হবে। কেননা নিজে নিজের আকিকা ও সম্পন্ন করা যায়। এর জন্য আপনারা সকলেই সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকার সম্পন্ন করুন।
জায়েজ পশু আকিকা করানোর জন্য
আমাদের মুসলমানদের জন্য যে সকল পশু জায়েজ করে দেওয়া হয়েছে সেই সকল পরশু দিয়ে আকিকা সম্পন্ন করতে হবে। কুরবানী করার মাধ্যমেও আকিকা সম্পন্ন করা যায়। মেয়ে এবং ছেলেদের আকিকা দেওয়ার জন্য হালাল কোনো পশু দিয়ে আকিকা দেওয়া যাবে না। এটি ইসলামিক দৃষ্টিতে একটি বড় ধরনের অপরাধ। কেননা হালাল কোন পশু দিয়ে আকিকার দেয়া আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। মেয়েদের আকিকা দেওয়ার জন্য জায়েজ পশু গুলো হলো- গরু, উট, মহিষ, ছাগল অথবা ভেরা এই পশুগুলো দিয়ে আকিকা করানো যাবে।
আকিকার পশু যেন কুরবানী পশুর মত সুস্থ সবল এবং ত্রুটিমুক্ত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হযরত উম্মে কুরজ রাজিআল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন- আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেছেন যে ‘নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুটি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে’ । ( তিরমিজি শরীফ, প্রথম খন্ড ,পৃষ্ঠা- ১৮৩; আবু দাউদ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-৪৪ )
আরো পড়ুনঃ ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ১৪৪৫ হিজরি কত - ১৪৪৫ হিজরী ক্যালেন্ডার
আবার অন্যদিকে হযরত আয়েশা রাঃ বলেছেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন’। ( তিরমিজি শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৮৩; আবু দাউদ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৪৪ )
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় আপনারা যারা মেয়েদের জন্য আকিকা দিবেন তারা অবশ্যই একটি ছাগল দিয়ে আকিকা দিবেন। কেননা এটি একটি ইসলামিক বিধান। আর সকলেই ইসলামের নিয়ম অনুসারে সব কিছু মেনে চলে।
ইসলামিক নাম রাখা মেয়ে সন্তানের জন্য
আকিকা দেওয়ার অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মেয়ে সন্তানের ইসলামিক নাম রাখা। আমাদের ভেতরে অনেক মুসলমান আছে যারা আকিকা দেওয়া মানে শুধু নাম রাখাটাই বোঝে। কিন্তু আকিকা করার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তিনটি যেমন- নাম রাখা, পশু কোরবানি করা ও মাতা মুন্ডন করা। আকিকা দেওয়ার পাশাপাশি ইসলাম এবং হাদিস থেকে অথবা কুরআন থেকে মেয়ের জন্য সুন্দর দেখে একটি নাম রাখতে হবে।
নাম রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সাহাবীর নাম রাখা যাবে আবার যে কোন মহিয়সীর নাম রাখা যাবে। এতে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় না। তবে আল্লাহ তায়ালার ৯৯ টি নামের ভেতরে যদি নাম রাখেন তাহলে নামের আগে পিছে যে কোন একটি নাম বসিয়ে নাম রাখতে হবে এটি হলো ছেলেদের ক্ষেত্রে। এর জন্য পরিশেষে বলা যায় আকিকা করার পাশাপাশি নাম রাখাটাও অর্থাৎ ইসলামী নাম রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি ভুলে গেলে চলবে না।
ইসলামিক নাম রাখার পাশাপাশি মেয়ে সন্তানের আকিকা দেওয়ার আগে মাথা মুন্ডন করে দিতে হয়। ইসলামিক নিয়মে নাম রাখা, পশু আকিকা দেওয়া এর পাশাপাশি মাথা মন্ডন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আছে যারা মাথা মুন্ডন বিষয়ের বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার ছড়িয়ে বেড়ায় যে সন্তানের মাথা মুন্ডন করা অবস্থায় পশু কোরবানি করতে হয়।
তাহলে আপনারাও জেনে রাখুন এটি একটি কুসংস্কার। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক। আশা করি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে সকল কিছু বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের সকলেরই মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আগেকার মাংস বন্টনের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আকিকার নিয়ম সম্পর্কে সকল কিছু জানিয়েছি। চলুন তাহলে এবার জেনে নিই আকিকা দেওয়ার পর মাংস কেমন করে এবং কতটুকু বন্টন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম - মেয়েদের ইহরামের নিয়ম
আকিকা করার পর এই আকিকার মাংস সকলের জন্য খাওয়ার জায়েজ রয়েছে। আবার আমাদের ভেতরে অনেকজন আছে যারা বলে আগেকার মাংস সন্তানের দাদা-দাদীকে খাওয়া যাবেনা। তবে এগুলো সম্পূর্ণ ভুল। কেননা আকিকার মাংস সকালের ওই খাওয়ার অধিকার রয়েছে। আকিকার মাংস মূলত গরিব মিসকিন এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলেছেন, ‘আগেকার গোস্ত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে’। ( মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস নং: ৭৬৬৯ )
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url