বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় - দুধ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আজকের পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় ও দুধ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় এ সম্পর্কে জানেন না আজকের পোস্টের মাধ্যমে তাদেরকে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
চলুন দেরি না করে জেনে নেই বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় ও দুধ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

সূচিপত্র

ভূমিকাঃ বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায়

সৌদি আরবের খেজুরের কোন তুলনা হয় না কারণ সব জায়গাতে এর চাহিদা ব্যাপক। তেমন বাংলাদেশের সৌদি আরবের খেজুরের অনেক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের পবিত্র রমজান মাসে সেহেরী এবং ইফতারের জন্য খেজুরের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে যে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫০০০ টন খেজুর আমদানি করা হয়। সৌদি আরবের সাথে সাথে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর আমদানি করা যায়। খেজুর মানবদেহের অনেক উপকারী।

আরো পড়ুনঃ কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো - খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

এক কেজি খেজুর মানুষের শরীরে তিন হাজার সাতশ আশি ক্যালোরি জোগাতে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালার অশেষ নেয়ামতের মধ্যে একটি হচ্ছে খেজুর। মরুভূমিতে অন্যান্য ফল বা গাছপালা জন্মাতে পারে না পানির অভাবে। তবে খেজুর একমাত্র খেজুর মরুভূমিতে চাষ করা হয়। আমাদের দেশে সৌদি আরবের খেজুর চাষ করা হচ্ছে। এই অসম্ভব বিষয়টি বা ব্যাপারটি সম্ভব করেছে আমাদের দেশের বেশ কিছু উৎসাহী কৃষক ভাই।

বাংলাদেশের যেসব জায়গায় খেজুর চাষ করা হয়

বর্তমানে বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সৌদির খেজুরের চাষ করা হয়। বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় এবং যে জায়গায় পাওয়া যায় তা হল। বিশেষ করে বরিশাল, ঢাকা, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে খেজুরের চাষ হয়ে যাচ্ছে। এবং এই খেজুর চাষের ফলে কৃষক ভাইদের অনেক লাভও হয়ে যাচ্ছে। কৃষক ভাইরা বলেন, খেজুরের চারা রোপনের দিন থেকে চার বছর পর ফল চলে আসে। বীজের চারর চেয়ে কলমের চারার ফল বা ফলন খুব তাড়াতাড়ি আসে।

বাংলাদেশে মাটি এবং জলবায়ু সৌদির খেজুরের চাষের জন্য অনেক উপযোগী হয়ে উঠেছে। সৌদি খেজুর চাষ তেমন কোন জটিল বিষয় না। জায়গা নির্ধারণ করে জমি খেজুর চাষের জন্য তৈরি করলেই খেজুর চাষ করা খুব সহজ হয়ে যায়। সৌদির খেজুর চাষের ব্যাপারে সামান্য ধারনা নিতে পারলে খেজুর চাষ ও অনেক সহজে হয়ে পড়বে।

সৌদি আরবের খেজুরের চাহিদা

সৌদি আরবের খেজুরের চাহিদা অনেক বেশি এবং খেজুর গাছের চারারও চাহিদা অনেক। অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় এটা আগে জানতে হবে কারণ সব দেশের চেয়ে আমাদের দেশের খেজুরের চাহিদা অনেক বেশি। এবং এই চাহিদা গুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে আমাদের রমজান মাসে খেজুর বাজার করলে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা অনেক লাভবান হয়। কারণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়।

খেজুর গাছের ফলনের সময় সব সময় খেয়াল রাখতে হবে ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না। কারণ একটি চারার রোপনের পর কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে একটি খেজুর গাছের ফল আস্তে।

বাংলাদেশে খেজুর চাষ সম্পর্কে কৃষকদের মতামত

সৌদির খেজুরের চারা রোপনের রাগে স্ত্রী গাছ বা পুরুষ গাছ কিনা তার সঠিকভাবে দেখে নিতে হবে। বাগান তৈরির সময় স্ত্রী গাছ না পুরুষ গাছ দেখে এবং নিয়ম অনুযায়ী গাছটি রোপণ করতে হয়। সৌদি খেজুরের চাষ খোলামেলা উন্মুক্ত স্থানে থাকা উত্তম। কারণ খেজুর গাছগুলো পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না পেলে ভালো ভাবে ফলন হবে না এবং খেয়াল রাখতে হবে যে সেই জায়গায় জনক কোনো রকম পানি না জমে পানি জমলে খেজুর গাছ হবে না।

আরো পড়ুনঃ  দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

এবং কৃষকরা আরও জানান, আমাদের বাংলাদেশে উৎপাদিত সৌদির খেজুর এর মান অনেক উন্নত। আমাদের দেশে ১৬ প্রজাতির সৌদির খেজুর উৎপন্ন হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিখ্যাত খেজুর যেগুলো রয়েছে আজওয়া, আনবারা, সুক্কারী, বারহি, মরিয়ম ইত্যাদি জাতের খেজুর। আমাদের বাংলাদেশ উৎপাদিত উন্নত মানের সৌদি আরবের খেজুর বাজার বিক্রি করা হয় দুই হাজার টাকা থেকে ২০৫০০ টাকা পর্যন্ত।

দুধ ও খেজুর খাওয়ার নিয়ম

রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক কাপ অথবা এক গ্লাস গরম দুধে তিন-চারটা খেজুর দিয়ে খেতে হবে। এভাবে প্রায় ই ১০-১১ দিন খাইলে ইনশাআল্লাহ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দৃষ্টিশক্তি হবে এবং মিলবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান। দুধ ও খেজুর সেবনের ফলে শরীরকে সবল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। দুধ ও খেজুর প্রতিনিয়ত খাওয়ার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাবৃত্তি করে, মেয়েদেরকে প্রেগনেন্সির সময় অনেক সাহায্য করে থাকে, চোখের সমস্যা ও বলা যায় এটি এক ধরনের ত্বকের জন্য বিশেষ ফেসপ্যাক।

দুধ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

মানুষের শরীরের জন্য দুধ যেমন উপকারী তেমনি খেজুর অথবা শুকনো খেজুর এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও ভিটামিন। তাই গরম দুধের সাথে খেজুর মিশে খেলে শরীরের জন্য অনেক উপকার হয়ে থাকে। অনেক সময় আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা ব্রেকফাস্টে খেজুর মিশিয়ে খেয়ে থাকে এবং মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এর মতো এমন অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। খেজুরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিজেন, পটাশিয়াম, আইরন, সেলেনিয়াম, তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, হজমের জন্য উপযুক্ত ফাইবার ও প্রোটিন।

শরীরে অতিরিক্ত শক্তি ওয়ানার্জি বৃদ্ধি করতে খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে দুধের মধ্যে রয়েছে অনেক ক্যালসিয়াম, আইরন, ভিটামিন বি ১২, জিংক, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধির উপায়

দুধ ও খেজুর এর উভয়ের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনের মাত্রা। খেজুর ও দুধ একসাথে মিশলে আইরনের মাত্রা আরো অনেক বৃদ্ধি পায়। যা রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন ও প্রোটিনের মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। দুধের মধ্যে দুটি করে খেজুর দিয়ে ফুটানো হলে সেই উপাদান বা খাবারটি সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর। প্রত্যেক দিন সকালে খালি পেটে নির্দিষ্ট সময়ে এই উপকারী খাবারটাই খেতে পারেন। মাত্র ১০-১২ দিনের মধ্যেই রক্ত সল্পতার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

প্রেগনেন্সিতে দুধ ও খেজুরের উপকারিতা

বিভিন্ন গবেষণায় যারা গেছে যে, গরুর দুধের দুটি খেজুর ফেলে দিলেই দুধের আরও পুষ্টিকর ও উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়ে যায়। কারণ এই সময়ই দুধ অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত খেজুর ও দুধের উপকরণটি তৈরি করে প্রোটিন সেক হিসেবে খেলে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।

চোখের সমস্যা দূর করার উপায়

মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে একটি অঙ্গের নাম হচ্ছে চোখ। আমরা কেউ চাইনা আমাদের চোখের কখনো ক্ষতি হোক। এবং এই চোখের যত্নের জন্য অনেক উপায় অবলম্বন করে থাকি। বিভিন্ন চিকিৎসকরা পরামর্শ দেয় চোখকে ভালো রাখার জন্য খেজুর এবং দুধ খাওয়ার। তাছাড়াও চোখে অঞ্জনির সমস্যায়, যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন তাদেরও খেজুর ও দুধ খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

ত্বকের জন্য ফেসপ্যাক তৈরি করার ঘরোয়া উপায়

খেজুর ও দুধের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম এবং আমরা কি এটা জানি যে, খেজুর ও দুধের মিশ্রণটি ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত দুধের মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে রাখলে পরদিন সকালে সেটি একটি ঘন পেস্ট হয়ে যায় সেটার মধ্যে মধু মিশিয়ে মুখের ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর। সেটা শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ পেঁয়াজের তেল বানানোর নিয়ম - পেঁয়াজের তেলের উপকারিতা

সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে এ স্বাস্থ্যকর ফেসপ্যাক সপ্তাহে দুই একবার ব্যবহার করলে ইনশাআল্লাহ ফলাফল খুব ভালো হবে। তুই তো খেজুরের মিশ্রণটি তো কর চুলের জন্য খুব উপকারী। ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে মিশ্রণটি।

ওজন বাড়ানো ও ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের উপায়

আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা তাদের চিকন শরীর নিয়ে চিন্তিত এবং তারা ওজন বাড়াতে চান। কিন্তু হাজারো ওষুধ ও খাবার খেয়েও মন মত ফলাফল পাওয়া যায় না। তারা খেজুরের সাথে গরম দুধ মিশিয়ে খেলে অবশ্যই উপকৃত হবেন। শরীরে কোষ বৃদ্ধি পাবে, টানা কয়েক সপ্তাহ  খেলে ইনশাআল্লাহ ওজন বাড়বে এটি খুবই স্বাস্থ্যকর ও উপকারী।

রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুধ ও খেজুরের মিশ্রণটি খেতে হবে। এটি ডাইবেটিস রোগীর জন্য অনেক কার্যকরী। এর জন্য অনেকে দুধের সাথে ভেজানো খেজুর খেয়ে থাকেন। তাছাড়াও হাড় শক্তিশালী করে, মাংসপেশি তৈরি করে অনেক বড় ভূমিকা রাখে দুধ ও খেজুর।

শেষ কথা

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় এবং দুধ খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে যা আলোচনা করলাম তা আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন। আমাদের পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সবার মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url